বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নির্যাতন থেকে বাঁচতে পাঁচতলা থেকে লাফ

  |   শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

নির্যাতন থেকে বাঁচতে পাঁচতলা থেকে লাফ

কিশোরী দুজনের ওপর নির্যাতন চরমে ওঠে। বাধ্য হয়ে তারা পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তারা থাকত ফ্ল্যাট বাড়ির পাঁচতলায়। জানালার গ্রিল ভেঙে শাড়ি ঝুলিয়ে দেয়। এই শাড়ি বেয়ে নেমে আসার সময় হাত ফসকে পাঁচতলা থেকে মাটিতে পড়ে যায় তারা। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও একজনের পা ভেঙে গেছে। অপরজন মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। দুজনই গৃহকর্মী। তারা জানায়, প্রতিদিন মালিক তাদের নির্যাতন করত। তাই বাসার পাঁচতলার গ্রিল ভেঙে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাঁচতলা থেকে নামার সময় হাত ফসকে পড়ে যায় তারা।

মাথায় আঘাত পাওয়া কিশোরীর নাম নাছমিনা সাবিন খান। বয়স ১৪ বছর। গ্রামের বাড়ি যশোরে। পা ভেঙে যাওয়া কিশোরীর নাম আফসানা লাকি। তার বয়স ১৫ বছর। বাড়ি বরিশালে। গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর ওয়ারীর হেয়ার রোডের ওয়ারী কমপ্লেক্সের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। ওই দুজনকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় ওয়ারী থানা-পুলিশ ওই দিনই গৃহকর্ত্রী শাহীনা আলমগীরকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে। শাহীনার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। মেয়েকে নিয়ে শাহীনা ওই বাড়িতে থাকেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই গৃহকর্মীকে ঢাকার শিশু আদালতে আনা হয়েছিল।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেহাদ হোসেন  বলেন, এই দুই কিশোরী ওয়ারীতে শাহীনা আলমগীরের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। ওই নারী এই দুই কিশোরীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। তাদের বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। ঘটনার দিন বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে গৃহকর্ত্রী বাইরে যান। তখন নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে নাছমিনা ও আফসানা জানালার গ্রিল ভেঙে ফেলে। সিনেমার গল্পের মতো তারা তিনটি শাড়ি জোড়া দিয়ে জানালার সঙ্গে বেঁধে ওই শাড়ি বেয়ে নামতে থাকে। পাঁচতলা থেকে নামতে গেলে মেয়ে দুটি পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তারা এখন সুস্থ আছে।

পাঁচতলা থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরপরই অজ্ঞান হয়ে পড়ে এই দুই কিশোরী। ওই বাসার ব্যবস্থাপক সঞ্জীব রায় বাদী হয়ে গৃহকর্ত্রী শাহীনার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সঞ্জীব গতকাল বলেন, ‘মেয়ে দুটি পাঁচতলা থেকে পড়ে গেলে পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যায়। খবর দেওয়ার পর পুলিশ উদ্ধার করে তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।’

আদালত চত্বরে পা ভেঙে যাওয়া আফসানা  বলে, কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী। বাইরের কোনো লোকের সঙ্গে মিশতে দিতেন না। বাইরে থেকে তালা মেরে যেতেন। নাছমিনা সাবিন খান বলে, তার বাবা-মা নেই। আগে সে মিরপুরের একটি বাসায় থাকত। দুই মাস আগে ওয়ারীর ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ শুরু করে। তাকেও মারধর করা হতো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুয়েল চৌধুরী  বলেন, নির্যাতনের অভিযোগে তিনি ওই বাসার মালিক শাহীনাকে গ্রেপ্তার করেন। তবে গত সপ্তাহে শাহীনা আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী  বলেন, নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আফসানাকে গতকাল জিম্মায় নিয়েছেন তার মা মিনারা। নাছমিনা সাবিন খানকে কোনাবাড়ীর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:০০ | শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com