বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে : দেশের মানুষ আতঙ্কিত

  |   মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট

নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে : দেশের মানুষ আতঙ্কিত

মো. ওসমান গনি

দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারনে অপ্রত্যাশিত হারে বেড়ে যাচ্ছে নারী ও শিশুনির্যাত সমাজে বিচারহীনতা ও অপরাধীর যথাযথভাবে শাস্তি কার্যকর না হওয়ায় সমাজে নারী নির্যাতনের মতো গর্হিত কাজ কমছে না বরং বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন  নারী-শিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। স্কুল-কলেজ এমনকি বাসাবাড়িতেও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। পৈশাচিকতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজনসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষ সঠিক বিচার না পাওয়ায় অপরাধীরা দমছে না। বিশেষ করে ফেনীর সোনাগাজীতে একজন মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার সংঘবদ্ধ ঘটনা মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন আরো ব্যাপক করার আহবান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে তা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন দেশের সচেতন মহল।হয়েছে।  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নুসরাত প্রতিবাদ করে গেছে। নারী নির্যাতন রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সক্রিয় হতে হবে। আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তবে সম্প্রতি নারী নির্যাতনের হার বেড়েই চলেছে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে নারী নির্যাতনের হার কমছে না।

উল্লেখ্য, দেশে রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতার কারণে দুর্বলশ্রেণি ও নারীদের প্রতি নির্যাতন বাড়ছেই। সর্বশেষ ফেনীর সোনাগাজীর মতো সচেতন এলাকায় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পরোক্ষ আসকারায় এতটি মেয়ের জীবনহানি ঘটেছে। ওই মাদ্রাসা অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে লোকজন যেভাবে জড়ো হচ্ছে তাতে এই হত্যাকান্ডের বিচার হবে কি না সন্দেহ। সঠিক বিচার না হওয়ায় অপরাধীদের সাহস বাড়ছে।‘মানুষ সঠিকভাবে বিচার পাচ্ছে না। যার ফলে অপরাধীদের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।’ এগুলোর একটি পরিসমাপ্তি ঘটা উচিত। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশে অনেক আইন আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি- আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। মানুষ সঠিকভাবে বিচার পাচ্ছে না,যার ফলে অপরাধীদের সাহস আরো দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।‘সম্প্রতি নারীর প্রতি, শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, সেটা সমাজের জন্য একটি খারাপ বার্তা দিচ্ছে।

মানুষ শঙ্কার মধ্যে বসবাস করছে। আমরা জানি না কে কখন এ নির্যাতনের শিকার হয়ে যাবে। এগুলোর একটি পরিসমাপ্তি ঘটা উচিত। আইনের মাধ্যমে। দ্রুততম সময়ের ভেতরে বিচার সম্পন্ন করতে হবে অপরাধীদের। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।  দুঃখজনক এবং হতাশাজনক লাগে যে, নুসরাতের অকাল মৃত্যুর জন্য যাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, তাকে যখন রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার চেহারায় আমরা কোনো অনুশোচনাবোধ দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়নি সে ভীতসন্ত্রস্ত। তার মানে অপরাধীদের মনের ভেতরে আমরা এখনও দাগ কাটাতে পারিনি। অপরাধীরা ভীত হলে অপরাধ ঘটানোর আগে চিন্তা করতো।’ নুসরাতের বিষয়ে পুলিশের আচরণ প্রসঙ্গে আমি মনে করি, প্রাথমিকভাবে নুসরাতের যে মানবিক মর্যাদাহানি করা হয়েছে, তারও বিচার হওয়া উচিত। থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু প্রত্যাহার না, বিষয়টি তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নুসরাত প্রতিবাদ করে গেছে।  নুসরাত একজন প্রতিবাদী মানুষ। অন্যায়ের কাছে, কারও যৌন লালসার কাছে নত হয়নি। নুসরাত আজকে তার নিজের জীবন দিয়ে প্রতিবাদটি করে গেলো। অনেকেই নত শিকার করে, সায় দেয়। কিন্তু নুসরাত সেটা করেনি।  তার প্রতিবাদ আমাদের সবার কাছে শিখণীয়।  সমাজে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। শিক্ষাঙ্গনে মেয়েদের উপস্থিতি বেড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিশু ও নারীদের উপর নির্যাতন বাড়ছেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত জনগণের সহযোগিতায় এই প্রবণতা রোধে সচেষ্ট হওয়া।  সর্বোচ্চ শাস্তি দরকার। আগেও এমন ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। শিশু ও নারীদের উপর যৌন নির্যাতন চলছেই। কিন্তু ফেনীর একজন মাদ্রাসাছাত্রীর উপর যৌন হামলা ও তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

এসব ঘটনায় যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে সরকারের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া।বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনে কোনো শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের শিকার হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শিশু ও নারীদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বিচারহীনতা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশে যুগোপযোগী বেশ কয়েকটি আইন আছে। আছে বহুমুখী তৎপরতাও। তারপরও দেশে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি বর্বর, লোমহর্ষক নির্যাতনের ধরন, মাত্রা ও ভয়াবহতা ক্রমান্বয়ে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সেই সঙ্গে অপরাধীকে রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন দেয়াও সহিংসতা বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ। এ অবস্থায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইনের প্রয়োগ জরুরি। একই সঙ্গে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বেশ কয়েকটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানি করায় মামলা করলে সে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে বোরকা পরে ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তার গায়ে। টানা চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে গত ১০ এপ্রিল(বুধবার)  রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যু হয় তার। এ মর্মান্তিক ঘটনার সংবাদ যেন আর আমাদের পড়তে না হয়, লিখতে নাহয়। নুসরাত মৃত্যুর আগে বারবার বিচার চেয়েছে। একই সঙ্গে সে নারী নির্যাতন বন্ধের কথাও বলেছে। তার বারবার বলা ‘বিচার’-এর শব্দার্থ হচ্ছে, তার ওপর নির্যাতনকারীর বিচার ও এর আগে যেসব নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে; সব অপরাধীর বিচারকার্য সম্পাদন। আমরা পিছিয়ে পড়া নারীদের সামনে এগোনোর পথ দেখাতে পারি। কিন্তু আর যেন নুসরাতের মতো কেউ এমন বর্বর ঘটনার শিকার না হয়।

সুবর্ণচরের চরজব্বার থানায় গত ৩১ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর বাড়ি ফেরার পথে স্বামীকে আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয় এক নারীকে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ষষ্ঠ শ্রেণির মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ, ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোরীকে গণধর্ষণ, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কিশোরীকে ধর্ষণ, গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ৭ বছরের ছেলেকে যৌন নির্যাতনের ঘটনাসহ সারাদেশে ভয়াবহ হারে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে নুসরাতের ঘটনার পরপরই গত বুধবার নরসিংদীতে বাসে তিনটি মেয়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা, কুমিল্লার তনু হত্যার বিচার কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। নির্যাতনকারীদের শাস্তি না হওয়ার কারণে দিন দিন অপরাধ

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২১:৫১ | মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

অবাধ্য ভাবনা
(495 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com