| বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
ওয়েছ খছরু, সিলেট : নিজ দলের দুই ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ঠেকাতে নির্বাচনী মাঠে সিলেটের আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা চষে বেড়াচ্ছেন দুটি নির্বাচনী আসনের অলি-গলি। আর তাদের পদচারণাকে ঘিরে নির্বাচানী মাঠেও ছড়িয়ে পড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা। ইতিমধ্যে এই দুই বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক ক্যাডাররা। এতে করে নির্বাচনী মাঠে আতঙ্ক নেমে এসেছে। প্রধান বিরোধী দল মাঠে নেই। এজন্য সিলেটের চারটি নির্বাচনী আসনে ইতিমধ্যে ফলাফল চূড়ান্ত হয়ে গেছে। একক প্রার্থী হয়ে বিজয় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন, সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সিলেট জেলা সভাপতি সেলিম উদ্দিন ও সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে, সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর) এবং সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে নির্বাচন হচ্ছে। এ দুটি আসনে এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে স্পষ্টত বিভক্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের আওয়ামী লীগ। বলা হচ্ছে, সিলেটে আওয়ামী লীগের পদবীধারী নেতারা ও তৃণমূলের নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পদবীধারীরা যার পক্ষে তৃণমূল তার বিপক্ষে। সিলেট-২ আসনে ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ আসনে এবার মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান। মুহিবুর রহমান জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক সিনিয়র নেতার কারণে তার পক্ষে থাকা মাঝারি ও তৃণমূলের নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারা। আর তাদের সঙ্গে মাঠে নেমেছে ক্যডারবাহীনি। এ কারণে ভোটের দিন প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালালেও নির্বাচনী প্রচারণায় ক্যাডার বাহিনী থাকায় ভোটারের উপস্থিতি কমে আসতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এহিয়ার পক্ষে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সিলেট-২ আসনের এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এবং তারা দলীয় নেতাকর্মীদের বহিষ্কারেরও হুমকি দিচ্ছেন। এদিকে, ভোটের মাঠে আগে থেকেই ক্যাডার বাহিনী নামার খবরে ভোটারের মধ্যে আতঙ্ক নেমে এসেছে। মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেছেন, নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। ভোটাররা যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবেন। তারা বলেন, কোন ধরনের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং আওয়ামী লীগ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ আসনের তিন থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ইতিমধ্যে মহাজোট প্রার্থী এহিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। কিন্তু তারা মাঠে থাকলেও তৃণমূলের নেতারা নীরব রয়েছেন। মুহিবুর রহমান জানান, তৃণমূলের ৯০ ভাগ নেতাকর্মী তার পক্ষে রয়েছেন এবং শত বাধা ও আতঙ্ক ছাপিয়ে তারা আনারস প্রতীকে ভোট দেবেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে সিলেট-৪ নির্বাচনী আসনে। এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১
নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। এ কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরই ভোটযুদ্ধ হচ্ছে। নির্বাচনের শুরু থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ দ্বিধা-বিভক্ত। সুবিধাভোগী নয় আওয়ামী লীগের এমন অংশটি রয়েছে ফারুকের পক্ষে। এরপর নির্বাচনের এক সপ্তাগ আগে সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আসনের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন। ফারুক আহমদ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে দলের সিনিয়র নেতারা এলাকায় পৌঁছে ভোট প্রার্থনা শুরু করেছেন। একই সঙ্গে ক্যাডারবাহিনী দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। এদিকে, গতকাল স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুক আহমদ জৈন্তাপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দিসহ পাথর কোয়ারিতে জড়িত চাঁদাবাজদের উৎখাত করবেন। তিনি বলেন, এসব চাঁদাবাজদের কারণে সাধারণ শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন। এ সময় সাধারণ মানুষের কাছে তিনি তার নির্বাচনী প্রতীক আনারস মার্কায় ভোট চান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হাসান, গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মনসুর আহমদ বাবুল, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ প্রমুখ। এদিকে, জেলা রিটার্নিং অফিসার সূত্র জানিয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করেছেন তারা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। একই সঙ্গে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা প্রতিটি কেন্দ্রে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচনে যারাই আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন তাদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। তবে আজকের মধ্যে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট জেলার ২ ও ৪ আসনের সবগুলো ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ: ভোটের অপেক্ষায় থাকা সিলেট-২ ও সিলেট-৪ আসনের যতগুলো ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে তার সবগুলো ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে। ভোটের দিন গোলযোগেরও আশঙ্কা করা হয়েছে। সিলেট জেলার নির্বাচন রিটার্নিং অফিসার শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত নির্বাচনের ছেয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নজরদারি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, পুলিশের স্টাইকিং ফোর্স, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বাংলাদেশ আনসার বাহিনী। এছাড়াও থাকবে সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এবং নির্বাচন চলাকালে নির্বাচনী এলাকায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের ১৪৭টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলোতে ও সিলেট-৪ আসনের ১৪৩টি ভোট কেন্দ্রে সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি নির্বাচন প্রতিরোধের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে গঠন করেছে সংগ্রাম কমিটি। আসনগুলো রয়েছে বিভিন্ন মহাসড়কের পাশে। যার কারণে বিভিন্ন দলের বহিরাগত নেতাকর্মীরা গিয়ে নানা ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করারও আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা হেরে যাচ্ছেন অনুভব করলে তাদের লোক দিয়ে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সংঘাত বাধানোর আশঙ্কাও রয়েছে। যার কারণে সিলেটের-২ ও সিলেট-৪ সংসদীয় আসনের প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে ।
Posted ১৯:১৭ | বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin