নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি,
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় র্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের ওপর আইনজীবীরা চড়াও হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই তারেক সাঈদকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, রিমান্ড শুনানি শেষে এজলাসের ভেতরে আসামি পক্ষের এক আইনজীবীকে গণপিটুনি দিয়েছে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। এ সময় রাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদের ওপর চড়াও হন তারা।
বিকাল পাঁচটা ২০ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে দুইজন কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিকেল পাঁচটা ৪৫ মিনিটে তাদের আবারো নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে নেয়ার সময় ক্ষুদ্ধ আইনজীবীরা কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই তার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন আইনজীবী পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই তারেক সাঈদকে কিলঘুষি মারতে থাকে।
রিমান্ড শুনানিতে চাকরিচ্যুত তারেক সাঈদ মাহমুদ বলেন, “আমাদের ঘৃণার চোখে দেখা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। আমাদের সহমর্মিতার চোখে দেখা হোক। সত্য সত্যই, আর মিথ্যা মিথ্যাই। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। যখন সত্য প্রমাণিত হবে তখন আমাদের সহানুভূতির চোখে দেখবে সবাই।”
র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়নক বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য চিকিৎসক দেয়া হচ্ছে না। আমরা আইনি সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের আইনি সহযোগিতা দেয়া হোক। আমাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হোক।”
তারেক সাঈদ বলেন, “আমাদের এক দিন, ১০ দিন কিংবা ১০০ দিন রিমান্ড দেয়া হোক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরাও এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার চাই। সেই সঙ্গে আমরা হত্যার শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তাদের হাজির করে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
র্যাবের সাবেক এই দুই কর্মকর্তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়। ১৭ মে ভোররাতে মিলিটারি পুলিশের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সাবেক দুই সেনা কর্মকর্তাকে তাদের ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন র্যাবের সাবেক আরেক কর্মকর্তা এম এম রানাকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং পরদিন আরো একজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার।
৪ মে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, “ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।”