বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারেকের বিরুদ্ধে পুরো ১৪ দলের সর্বশক্তি প্রয়োগ : সত্যকে আড়ালের চেষ্টা

  |   শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

তারেকের বিরুদ্ধে পুরো ১৪ দলের সর্বশক্তি প্রয়োগ : সত্যকে আড়ালের চেষ্টা

এডভোকেট মোহাম্মদ ওবায়দুল কবীর

Obaydul Kabir Khokun

গত ২৫শে মার্চ লন্ডনে বিএনপি’র  মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় তারেক রহমান জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষনাকারী এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে উল্লেখ করায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত আওয়ামী লীগ তথা সরকার সমর্থক ১৪ দলের সমর্থকদের মাঝে তুমূল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । তারেক রহমান সেইদিন আওয়ামী লীগের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন ৭ মার্চ কিংবা ২৫ মার্চ কোন তারিখেই শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এমনকি  দেয়ার ইচ্ছেও তার ছিলোনা। যদিও স্বাধীনতাকামী জনগণ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে চেয়েছিলো, কিন্তু তারা জনগণের মনের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে জিয়াউর রহমান সফল। সেদিন ৭ কোটি বাঙালির স্বাধীনতার আকাংখা অনুযায়ী জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

তারেক রহমান তার ৩৬ মিনিটের বক্তৃতায় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ও দলিল উপস্থাপন করে বলেন, ৭ ই মার্চ কিংবা ২৫ শে মার্চ শেখ মুজিবের  স্বাধীনতার ঘোষণার দাবির পক্ষে একটি প্রমানও আওয়ামী লীগ উপস্থাপন করতে পারেনি। তারেক রহমান ৭১ সালের ৮ ই মার্চে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের রিপোর্টের একটি কপি দেখিয়ে বলেন, ভাষনটি স্বাধীনতার ঘোষণা হলে পরের দিনের  পত্রিকায় প্রকাশিত হলোনা কেন ? আসলে বাস্তবতা হলো ৭ মার্চের ভাষনের পরেও শেখ মুজিব তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ১৬, ১৭, ১৯,২০,২১, ২৩ এবং ২৪ মার্চ পাকিস্তানীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। এমনকি বৈঠকে ৪ দফা চুক্তিতেও উপনীত হয়েছিলেন।

তারেক আরো বলেন,  ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা হলে, এ ধরণের বৈঠক হতে পারেনা। আসলে শেখ মুজিবের কোন যুদ্ধ পরিকল্পনা ছিলোনা।  যারা দাবী করেন শেখ মুজিব ২৫ মার্চে স্বাধীনতার একটি ঘোষনাপত্র চট্টগ্রামে পাঠিয়েছিলেন সেটিরও কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পত্রিকার একটি কপি দেখিয়ে বলেন, ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হলে পরেরদিন পত্রিকায় সেটি প্রকাশিত হলোনা কেন? অথচ একই পত্রিকায় শেখ মুজিবের সারা বাংলায় অবরোধের ডাক সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিলো। তারেক রহমান আরো প্রশ্ন করেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পূর্ববাংলায় অবরোধ ডাকলেন কার বিরুদ্ধে। মিথ্যাচার কিংবা ইতিহাস বিকৃতি নয়, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এসব প্রশ্নের জবাব এখন সময়ের দাবী। তিনি  বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতিটি নেতাকর্মীদেরকে এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন,  ইতিহাস সাক্ষী, ৬ দফা অন্দোলনে শেখ মুজিব ভুমিকা রেখেছিলেন এ নিয়ে কেউ বিতর্ক করছেনা। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটাই ইতিহাসে প্রমানিত ।

তারেক রহমানের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের এমপি, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী সহ সকলেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে   তিরষ্কারের বানে তারেকের  চুড়ে দেওয়া চেলেঞ্জকে আড়াল করার চেষ্টা করেন ।

গত ৮ই এপ্রিল সেন্ট্রাল লন্ডনের  অভিযাত ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত  সুশীল  সমাজের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ।

তিনি  ২৫ মার্চ আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া নিজের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে  বলেন, “ওই অনুষ্ঠানে ইতিহাসের আলোকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছিল জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক। কিন্তু এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়ে অশ্লীল কথা বলেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে ছোট করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ৪০০ টাকার মেজর। এ ধরণের মন্তব্য করে শেখ হাসিনা  বরং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকেই অপমান করেছেন। কারণ এই ৪০০ টাকার মেজর, ২০০ টাকার ক্যাপ্টেন, ১০০ টাকার সিপাহী, ৫০ টাকার কৃষক কিংবা লুঙ্গি পরা গামছা পরা স্বাধীনতাকামী মানুষগুলোই কখনো একবেলা অথবা আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো নিরাপদে কলকাতা পাড়ি জমালে আর মুক্তিযুদ্ধ হতো না।”

তারেক রহমান বলেন, “ইতিহাস হলো, ৪০০ টাকার মেজররাই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু যাদের কাছে মানুষ আশা করেছিল তারা মুক্তিকামী মানুষকে নেতৃত্ব দিতে ব্যার্থ হয়েছিলেন।”

তারেক বলেন, “বাংলাদেশের প্রথম অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি  ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।”

তারেক রহমান ঘোষণাপত্রের একটি বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে লেখা রয়েছে, “এতদ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন”।  তারেক বলেন, “কিন্তু ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে শেখ মুজিব ১২ জানুয়ারী কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন? তখনও তো সংবিধান প্রণীত হয়নি। ”

তারেক রহমান ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ‘সাপ্তাহিক’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত ডক্টর কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, “শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেছিলেন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরে হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি জাতিসংঘের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটিও করেননি। ”

তিনি বলেন, “শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বায়ত্বশাসন।” তারেক রহমান অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশী একটি সংবাদ সংস্থায় প্রচারিত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপস দেখান। ওই সাক্ষাতকারে শেখ মুজিব বিদেশী এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্বাধীনতা? নো নো আই ডোন্ট মিন দ্যাট, আই ওয়ান্ট অটোনমি’।”

তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত কয়েকদিন আগে বলেছেন, কারো ঘোষণায় স্বাধীনতা আসেনি। অথচ এই আবুল মাল তার ‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্স অব এ নেশন’ বইয়ে লিখেছেন, জিয়াউর রহমানই প্রথম স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।”

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ, “বাংলা নামের দেশ” পুস্তকের উদৃতি, ভারতের“ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের” রেকর্ড এবং ভারত রক্ষক সাইটের রেকর্ড দেখান যেখানে জিয়াউর রহমানকেই স্বাধীনতার ঘোষক ও রাষ্ট্রপ্রধান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

10245363_566023723505379_7641663507534697461_n

( মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ, বাংলা নামের দেশ পুস্তকের রেকর্ড )

‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ নামে একটি বই থেকে তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্য উদ্বৃতি করে তারেক বলেন,     “২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দিন আহমদ শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা ঘোষণার অনুরোধ জানালে তিনি  স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানান। শেখ মুজিব তাজউদ্দিনকে সাফ জানিয়ে দেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে।”

1459249_648101505277817_1241881245_n

( ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড, ভারত রক্ষক সাইটের রেকর্ড : http://www.bharat-rakshak.com/LAND-FORCES/Army/History/1971War/PDF/1971Chapter03.pdf  )

তারেক রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, ৭১ এর ১০ এপ্রিল থেকে শেখ মুজিব বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তাহলে, ২৬  মার্চ থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ কি নেতৃত্বশূন্য ছিল। ”

শেখ সাহেবকে  ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একহাত নিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তারেককে ‘বাচ্চা ছেলে’, ‘আহাম্মক’ ও লেখাপড়া জানে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে শেষ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ।

10154974_562198347221250_1340189894_n
তথ্যসূত্র : বিভিন্ন লেখকের  বই, নিউজ পেপার, অনলাইল নিউজ পেপার ও তারেক রহমানের বক্তব্য  এবং ওয়েবসাইট  ।
লেখক : সম্পাদক, স্বাধীনদেশ.কম

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৫:৪৭ | শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com