শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে যে পরিবারে ছেলেরা বাঁচে না সেই পরিবারে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন 

  |   বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

ঝিনাইদহে যে পরিবারে ছেলেরা বাঁচে না সেই পরিবারে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন 

Pic (3)
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ মৃত্যুর কোনো বয়স নেই। কেউ বলেন, সময় ফুরালেই চলে যেতে হয় আবার কেউ বলেন, ‘ডাক আসলেই’ চলে যেতে হবে। যে যেভাবেই বলুন-এটাই চিরন্তন সত্য। কিন্তু আঠারো বছরের আগেই একটি পরিবার বা বংশের পুরুষ সন্তানদের নির্ঘাত মৃত্যুর কথা কি কেউ শুনেছেন? এমন একটি পরিবারের সন্ধান মিলেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভেন্নতলা গোপীনাথপুর গ্রামে।নির্দিষ্ট বয়সের গন্ডি পেরোবার আগেই ওই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের একের পর এক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয়ে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এলাকাবাসী জানান, গোপীনাথপুর গ্রামের মজিবর রহমান স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরন করলেও তার দুই সন্তান বাবু ও আব্দুস সাত্তার ১৫ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে। মজিবরের একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমের তিন ছেলে সন্তানের অবস্থাও একই রকম করুন। এর মধ্যে তার বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম ১৮ বছর পুর্তির আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। এখন বাকী দুই সন্তান আনারুল ইসলাম (১০) ও সাবিকুল ইসলাম (৮) প্রতিবন্ধী হয়ে বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুণছে। মৃত মজিবর রহমানের স্ত্রী আনিসা বেগম জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বড় ছেলে বাবু ১৮ বছর বয়সে মারা যায়। এরপর ছোট ছেলটি মারা যায় ১৬ বছর বয়সে।

আনিসা বেগম আরো জানান, একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমকে স্থানীয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রাখা হয়েছে। রফিক রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মেয়ের তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে আঠারো বছরের আগেই মারা গেছে। বাকি দুই নাতি এখন পঙ্গু হয়ে বিছানায়। ছেলে ও নাতিদের এর আগে ভারতের কৃষ্ণনগর, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঝিনাইদহ ও যশোরের কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন-কিন্তু ফল হয়নি।চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জন্ম ব্যাধি।

মঞ্জু বেগম জানান, তাদের বংশে মেয়ে সন্তানরা এই রোগে আক্রান্ত হয় না। তিনি ও তার দুই মেয়ে রাবিনা খাতুন (১৪) ও সাবিনা খাতুন (৯) সুস্থ আছেন। রাবিনা ক্লাস নাইনে ও সাবিনা ক্লাস থ্রীতে পড়ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মহিউদ্দীন বলেন, আমি পরিবারটিকে চিনি। এই পরিবারে কোনো ছেলে সন্তান বাঁচে না। অজ্ঞাত রোগটির চিকিৎসায় পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন ভিটেবাড়ি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। একই গ্রামের লতাফৎ মন্ডল জানান, মজিবর রহমানের দুই ছেলে ও তার মেয়ের তিন ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজে দুইবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোগটির উপযুক্ত কোন চিকিৎসা মেলেনি। তিনি পরিবারটির উপযুক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ শহরের ক্রিসেন্ট প্যাথলজির প্রাইভেট প্রাকটিশনার ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা জানান, ৬ মাস আগে তিনি চিকিৎসা করেছিলেন মঞ্জুর দুই ছেলের। কিন্তু এখন রোগটি সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে প্রকৃত রোগ নির্ণয়ে আমি তাদের ঢাকার পিজি হাসপাতালে রেফার্ড করেছিলাম। আনিসা বেগমের ভাষ্যমতে ছেলেদের বয়স যখন ৬ বছর, তখন থেকেই তাদের দুই পা অবশ হতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে ন্যাংড়া হয়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে দুই হাত অকেজো হয়ে বিছানাগত হয়ে পড়ে। আর আঠারো বছরের আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায় পরপারে। পরিবারের একের পর এক সদস্যের এমন জটিল আর ‘অজ্ঞাত রোগের’ চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি এখন নিঃস্ব প্রায়। কাড়ি কাড়ি টাকা চলে যায়, কিন্তু রোগ নির্ণয় হয় না- একই কারণে মেলেনা উপযুক্ত চিকিৎসা।

তিনি জানান, ঝিনাইদহের একজন ডাক্তার তার নাতীদের রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি) যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। টাকার অভাবে যেতে পারেনি। এদিকে, ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন আব্দুল হালিম জানান, এ বিষয়ে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ইতি মধ্যে গোপীনাথপুর গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৩৫ | বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com