বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সময় আসেনি’

  |   শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০১৭ | প্রিন্ট

‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সময় আসেনি’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করে জনগণকে পরিচিত করার আগে জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রস্তুতির মধ্যে এই মত দিলেন তিনি।

শনিবার রাজধানীতে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এই মন্তব্য করেন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সিইসি।

এই বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার’। এর পক্ষে সরকারি দলে ছিল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং বিপক্ষে বিরোধী দল হিসেবে ছিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিতর্কে জয়ী হয়

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন করেছে শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথাগত ভোটিং পদ্ধতির বদলে তারা ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের গবেষকরা একটি যন্ত্র আবিষ্কারও করেন। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে এই যন্ত্র ব্যবহারও হয়। তবে যন্ত্রে ত্রুটির প্রমাণ পাওয়ার পর এটি ব্যবহার থেকে সরে আসে নির্বাচন কমিশন।

শামসুল হুদা মনে করেন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসাটা তাদের ভুল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কমিশন ইভিএম বন্ধ রাখটা এটা ব্যর্থতা ছিল।’

ইভিএমের কারিগরি দিক ছাড়াও এর রাজনৈতিক সমালোচনও হয়েছিল তখন। বিএনপি স্পষ্টতই ভোটে এই যন্ত্র ব্যবহারের বিরোধী ছিল। দলের নেতাদের দাবি, এই যন্ত্র হ্যাক করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে বিএনপির ভোট আওয়ামী লীগের ঘরে নিয়ে যাওয়া যাবে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন আরও উন্নত একটি যন্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই যন্ত্রটিতে আগের মত সমস্যা নেই এবং এক জনের পক্ষে একাধিক ভোট দেয়া সম্ভব নয়। এই যন্ত্র ব্যবহার করলে দ্রুত ফলাফল দেয়ার পাশাপাশি ভোটের সরঞ্জাম আনা নেয়ার হাঙ্গামাও কমবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে ভোটে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি অবস্থান আগের মতোই। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের আমরা ঘোরতর বিরোধী। এটা কারচুপির একটি নতুন সংস্করণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইভিএম কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের ভোটাররাও ইভিএমের সঙ্গে পরিচিত নয়।’

সাবেক সিইসিও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। তবে তা এখনই নয়। তিনি ধীরে চল নীতি নেয়া পক্ষে। শামসুল হুদা বলেন, ‘শুনেছি এবারো নাকি আবার ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব না। আমাদের দায়িত্বকালেও আশা করিনি এত তাড়াতাড়ি আমরা বা আমাদের পরবর্তী কমিশন এসে ইভিএম পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন করতে পারবে। এটা সময়ের ব্যাপার।’

শামসুল হুদা বলেন, ‘ইভিএম এখনো জনগনের কাছে প্ররিচিত বা গ্রহণযোগ্য নয়। এটাকে আগে উপজেলা নির্বাচন, মেয়র নির্বাচনগুলোতে ব্যবহার করে মানুষের কাছে আগে পরিচিত করতে হবে।’

তবে নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনতে ইভিএম ব্যবহারের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন সাবেক এই সিইসি। তিনি বলেন, ‘ব্যালট পেপার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়, এতে মূল্যবান ভোটটিও নষ্ট হয়। কিন্তু ইভিএমএ দেখে শুনে ভোট দেয়া যাবে। এছাড়াও ব্যালট পেপার সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ইভিএম ছিনিয়ে নিলে সেটা সাট ডাউন করে দিলেই হবে। তারা আর কিছু করতে পারবে না।’

শামসুল হুদা বলেন, ‘ব্যালট পেপার ছাপিয়ে আনতে কোটি কোটি টাকা লাগে। এগুলোকে ভোটের সময় সবগুলো কেন্দ্র পৌঁছানোর খরচ। প্রায় এক মিলিয়ন কর্মী এখানে কাজ করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হয়, এখানেও খরচ আছে। এই সব গুলো খরচই নির্বাচন কমিশনের বাজেট থেকে দিতে হয়।’

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘যদি এককালীন কিছু খরচে ইভিএম আনার ব্যবস্থা করা হয়, তবে নির্বাচন কমিশনের অনেকটা ব্যয়ই কম হবে।’

ইভিএম সম্পর্কে বিএনপির অবস্থানের বিষয়েও একমত নন শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে যারা ইভিএম ভোটে জিতেছে তারা কিছু বলেনি। কিন্তু যখন ওই ব্যক্তিই ইভিএম ভেটে পরবর্তীতে হেরে গেল, তখনি ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’

সাবেক সিইসি বলেন, ‘আমাদের মানসিকতা হচ্ছে যেভাবেই হোক নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে। জিতলে কোন কথা বলে না, কিন্তু নির্বাচনে হেরে গেলেই নির্বাচনের সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে শামসুল হুদার এমন মূল্যায়ন। তিনি বলেন, ‘ভালো হয়েছে, তবে আরো ভালো হতে পারতো। আমাদের সময়ও আমরা প্রায় নির্বাচনে দেখেছি। জেতার পর এক পক্ষ বলেছে, আমরা তো জিতে গেছি, কিন্তু আরো ভোট পেতাম।’ তিনি বলেন, ‘যা পাইসেন সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। কিন্তু সেটা থাকবে না। তাদের বিরোধী ভাবটা তো ধরে রাখতে হবে

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:২৪ | শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com