শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওজন করে কোরবানির পশুর বেচাকেনা

  |   শুক্রবার, ১৭ আগস্ট ২০১৮ | প্রিন্ট

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওজন করে কোরবানির পশুর বেচাকেনা

ডেস্ক রিপোর্ট : বেচাকেনাদিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওজন মেপে কোরবানির পশুর বেচাকেনা। হাটের ঝক্কিঝামেলা এড়াতে এবং স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরণ ইনজেকশনমুক্ত অর্গানিক পশু কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন ওজনে বিক্রি হচ্ছে এমন গরুর ফার্মে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ওজন করে পশু বেচাকেনায় কোনও বিধিনিষেধ নেই বলে জানিয়েছেন আলেমরা।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও দেলপাড়াসহ শহরের বেশ কয়েকটি গরুর খামারে ওজনে বেচাকেনা হচ্ছে কোরবানির পশু। গত বছর দুই-তিনটি ফার্মে এই পদ্ধতিতে গরু বেচাকেনা হয়েছিল। এ বছর আরও বেশ কয়েকটি ফার্মে এ পদ্ধতিতে গরু বেচাকেনা হচ্ছে। ৩৩০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু। আবার বড় গরু বেচাকেনা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে। বিক্রেতাদের দাবি, এই পদ্ধতিতে মোট ওজনের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ গরুর মাংস পাওয়া যাবে। তারা জানান, প্রতিদিনই এসব গরুর খামারগুলোতে আগ্রহী ক্রেতারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসছেন এবং ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। গরু পছন্দ হলে ওজন স্কেলে উঠিয়ে পরিমাণ দেখে বায়না করে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন। ঈদুল আজহার একদিন বা দুইদিন আগে গরু নিয়ে যাবেন।

দেলপাড়া দেশি অ্যাগ্রো গরুর ফার্মে কথা হয় দিল আহসান গালিব নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, ‘হাট থেকে গরু কিনতে গেলে ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরুকে স্টয়েরেড বা মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে কিনা এটা গরু দেখে বোঝার উপায় নেই। গত বছর হাট থেকে ইনজেশন পুশ করা গরু কিনে ধরা খেয়েছি। গরু জবাই করে মাংস ফ্রিজে রাখার পর তা পচে গিয়েছিল।’
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওজন করে কোরবানির পশুর বেচাকেনা

নগরীর চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন পন্টি বলেন, ‘তিন বছর আগে হাট থেকে গরু নিয়ে কোরবানি দিয়েছিলাম। তিনটি গরুর মধ্যে একটি গরু ইনকেশন দেওয়া বা স্টেরয়েড খাওয়ানো ছিল। ঈদের এক সপ্তাহের মধ্যে ফ্রিজে রাখা সব মাংস পচে দুর্গন্ধ বের হয়ে যায়। এরপর গত বছর থেকে দেশীয় ফার্মের অর্গানিক গরু কোরবানি দেওয়া শুরু করেছি। দেশি অ্যাগ্রো থেকে গত বছর দুটি গরু ওজনে কিনে নিয়ে কোরবানি দিয়েছি। মাংস খুবই ভালো হয়েছে। তাই এবারও একই ফার্ম থেকে কোরবানি দেওয়ার জন্য তিনটি গরু নিয়েছি। ওজন স্কেলে গরু বেচাকেনা হওয়ায় সুবিধা আছে। আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-দুখিদের মধ্যে বিলানোর জন্য যে পরিমাণ মাংস প্রয়োজন তা বুঝে গরু নিয়েছি। এতে ঝুঁকি কম । মাংস ভালো পড়বে এটাও নিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, কোরবানির প্রথম শর্ত হচ্ছে সুস্থ-সবল পশু কোরবানি করা।’

পুরান বন্দরের সিকান্দার অ্যাগ্রো ফার্মে কথা হয় ক্রেতা আবু জাফরের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘ওজন স্কেলে গরু মেপে বেচাকেনার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ঠকে যাওয়ার চিন্তা বা হারজিতের ভয়ের কোনও স্থান নেই। বেচাকেনায় দরদাম নিয়ে চেঁচামেচি করতে হচ্ছে না। আবার কোরবানিদাতা তার বাজেট অনুযায়ী সুস্থ-সবল পশু কিনতে পারছেন বলে তারাও খুশি। একজন ক্রেতা প্রয়োজন অনুযায়ী তার পছন্দের গরুটি কিনতে পারছেন।’

নারায়ণগঞ্জ পুরান বন্দর সিকান্দার অ্যাগ্রো’র স্বত্বাধিকারী সিকান্দার হোসেন জানান, ‘স্টেরয়েড ও মোটাতাজাকরণ ইনজেকশনমুক্ত পশু খামার থেকে খুব সহজে কিনতে পারছেন ক্রেতারা। গত বছর বন্দরের আমাদের এখান থেকে ওজনে ৯৫টি গরু বিক্রি করেছি। এবার আমার খামারে কোরবানির ঈদের জন্য ৪৮টি গুরু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ক্রেতাদের সাড়া বেশি পড়েছে। আমি মনে করি সুস্থ-সবল পশু কোরবানি করার জন্য অর্গানিক গরু সবচেয়ে উত্তম। তাই ক্রেতারা ফার্ম থেকে গরু নিচ্ছেন। এখানে ক্রেতা বিক্রেতাদের ঠকার কোনও চান্স নেই। কারণ, আমরা ধরেই নেই তাজা গরু ওজন স্কেলে ওঠানোর পর যা ওজন হবে, কোরবানি দেওয়ার পর সেখান থেকে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মাইনাস যাবে। ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মাংস পাওয়া যাবে। এই হিসাব করেই এখানে গরু বেচাকেনা হচ্ছে।’
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওজন করে কোরবানির পশুর বেচাকেনা

ফতুল্লার দেলপাড়া মিছির আলী কলেজের পাশে চার বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন দেশি অ্যাগ্রো। এই খামারের অংশীদার আহসান হাবিব জানান, ‘গত বছর আমাদের ফার্ম থেকে ১৪টি গরু ওজনে বিক্রি করা হয়েছে। এবার ঈদে ২৮টি গরু প্রস্তুত করেছি। এরই মধ্যে বেশিরভাগ গরু ক্রেতারা কিনে নিয়েছেন। বাকি গরুও খামার থেকেই বেচাকেনা হবে বলে আমরা আশা করছি। এ বছর ওজনে গরু বেচাকেনায় ক্রেতাদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। একসময় এই পদ্ধতিতে গরু বেচাকেনা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, বর্তমানে ক্রেতারা ঝক্কিঝামেলা মুক্ত এবং ফ্রেশ জিনিস চায়। এতে দুই-এক হাজার টাকা বেশি খরচ করতেও ক্রেতাদের বাধে না।’

নারায়ণগঞ্জের ফকিরটোলা মসজিদের ইমাম ও খতিব আলহাজ মুফতি সিরাজুল ইসলাম মনির জানান, ‘ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ওজন স্কেলে গরু মেপে বেচাকেনায় কোনও বিধিনিষেধ নেই। কারণ, হাট-বাজার থেকে মুরগি, মাছ, গরুর মাংস ওজনে মেপেই কেনাবেচা হচ্ছে। ২০ বছর আগে বাংলাদেশের কোনও হাট-বাজারে হাঁস, মুরগি, মাছ কেজি দরে বেচাকেনা হয়নি। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণে এখন এসব কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। গরু ওজন করে বেচাকেনায় কেন বিধিনিষেধ হবে? ইসলামের শরিয়তে বলা আছে, কোরবানির পশু হতে হবে সুস্থ-সবল। মোটাতাজাকরণ ই‌নজেকশন পুশ করা স্টেরয়েডযুক্ত অসুস্থ পশু কোরবানি করলে তা ঠিক হবে না। এজন্য কোরবানিদাতাকে পশুর হাট বা খামার যেখান থেকেই কোরবানির পশু কেনা হোক না কেন, সেটি যেন সুস্থ-সবল হয় সেটি দেখে কেনা উচিত।’
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:২১ | শুক্রবার, ১৭ আগস্ট ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com