বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চন্দ্রিমায় জিয়ার লাশ নেই, বাক্স সরিয়ে ফেলুন: শেখ সেলিম

  |   বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট

চন্দ্রিমায় জিয়ার লাশ নেই, বাক্স সরিয়ে ফেলুন: শেখ সেলিম

চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা না থাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, ‘সেখানে কোনো লাশ নেই তা ৪০ বছর আগেই প্রমাণিত। একটি বাক্স রয়েছে।

 

তিনি আরও বলেছেন, ‘তখন ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি লাশ থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। যদি লাশ থেকে থাকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রমাণ দিতে হবে।’ ভবিষ্যতে সংসদে লাশ নিয়ে যাতে কোনো কথা না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি স্পিকারের কাছে দাবি জানান।

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

 

এছাড়া এর আগে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে সংসদে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপিরা।

 

‘বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস বিল, ২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রথম ইস্যুটি তোলেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এমপিরা বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য দেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জিয়ার লাশ থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব দেন।

 

বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবে আলোচনাকালে বিএনপি দলীয় সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের লাশ সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যান) আছে কি নেই, সেটা বড় বিষয় নয়। সেখানে যে লাশ নাই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন, এটা নিয়ে আগে কথা বলেন নাই কেন? এখন কেন বলছেন?’

 

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতি বিএনপিও করে। তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে আমাদের সুপ্রীম কোর্টের নির্দশনা রয়েছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে কখনই বলতে শুনিনি, দেখিনি যে উনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন। তাদের প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে, সেটা বন্ধের আহ্বান বিএনপি জানাতে পারে।

 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নকশা, সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে? সেখানে লাশ আছে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেগম জিয়া স্বামী মনে করে কাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। তারই উচিত এই প্রশ্ন করা, উনার স্বামীর লাশ সেখানে আছে কি না? বিজ্ঞনিভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে তারই নির্ণয় করা উচিত। আপনারা দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন? ওখানে কি কারো মৃতদেহ আছে? নাকি অন্য কারো মৃতদেহ আছে?

 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একজন সাংসদ বলেছেন, সঠিক ইতিহাস আসতে নাকি শত বছর লাগে। মৃত্যুর ৪০ বছর পর সঠিক ইতিহাস বের হলে সমস্যা কোথায়? জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নাই, এটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ব্যবস্থা আছে। আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উৎঘাটনে ভয়ের কি আছে?

 

বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তার বক্তব্যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগও ছিল। মানিক মিয়া এভিনিউতে যে জানাজা হয়েছিল, তাতে সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন। শোক প্রস্তাবের উপর সংসদে দীর্ঘ আলোচনায় তারা অংশ নিয়েছিলেন। সেগুলো প্রসেডিংসের মধ্যে রয়েছে। আমার কথায় যদি কোনো অপ্রাসঙ্গিকতা থাকে তাহলে এক্সপাঞ্জ করুন।

 

তিনি বলেন, ‘কারো যদি অপমৃত্যু হয় তাহলে তার ময়নাতদন্ত লাগে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সামরিক আদালতে বিচারও হয়েছে। এটা অসত্য কিছু নয়। আজকে জেনারেল এরশাদ বেঁচে থাকলে তিনি লজ্জা পেতেন। লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকতেন।

 

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘আজ ৪০ বছর পর লাশ নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের লাশ রয়েছে বিএনপির এমপিরা তা সংসদে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানে যে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই, সেটা ৪০ বছর আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার লাশ পরিবারের কেউ দেখেনি। খালেদা জিয়া দেখেননি। তারেক জিয়া লাশ দেখার জন্য কান্নাকাটিও করেছিল। শাহ আজিজ একটি চালাকি করেছিল, ‘লাশ পাওয়া যাক না যাক একটা বাক্স পাঠিয়ে দাও’। সেই বাক্স পাঠানো হয়েছিল। জনমনে সন্দেহ ছিল, কিসের জানাজা করছি? শুধু বাক্স? নাকি ওখানে জিয়াউর রহমান আছে?

 

বিষয়টি নিয়ে তার সংসদে দেয়া বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেলিম বলেন, ‘২০ জুন ১৯৮১ সালে আমি সংসদের নতুন সদস্য। জিয়াউর রহমান তখন মারা গেছেন। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। সংসদে আমি সরকারের কাছে এটা জানতে চেয়েছিলাম। এটা প্রসেডিংস-এ আছে। আমি সেদিন বলেছিলাম, আপনারা প্রমাণ করেন। ওই বাক্সে কোনো লাশ আছে কি না। জনমনের সন্দেহের কথা সেদিন সংসদে বলেছিলাম। আমি দুই দিনের মধ্যে লাশের ছবি ছাপিয়ে জনমনের সন্দেহ দূর করতে বলেছিলাম। আর না পারলে জনমনের সন্দেহই প্রমাণিত হবে। আজ ৪০ বছরেও একখানা ছবি দেখাতে পারেননি। প্রমাণই করতে পারেননি। একখানা বাক্স দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। একটা বাক্স এনে বলেছেন জিয়াউর রহমানের লাশ। এই বিভ্রান্তি দূর হয়ে গেছে। ওখানে যে বাক্সটা আছে তা সরিয়ে লুই কানের নকশা বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

স্পিকারকে উদ্দেশ্য তরে তিনি বলেন, ‘সেখানে বাক্সটা যদি থাকে তা সরিয়ে দেন। জিয়ার লাশ জায়েজ করার জন্য তিন বড় রাজাকারকে সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছে। তাদের করবও সেখান থেকে সরিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। মানুষ এসব বিভ্রান্তি মেনে নেবে না।

 

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সংসদে কোনো বক্তৃতা দেয়ার ইস্যু পেলেই জিয়াউর রহমানের লাশ। এখানে লাশ আছে প্রমাণ করেন। এক মাস সময় দিলাম। ওই সময় সেনাপ্রধান এরশাদ সাহেবও লাশ দেখেননি। তাহলে কী দিয়ে প্রমাণ করবেন? লাশ নিয়ে আর রাজনীতি করিয়েন না। ওখানে কোনো লাশ নেই। কিছুই নেই। একটি বাক্স মাটি দিয়েছে। ৪০ বছর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষমতায় থেকেও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। একটি বাক্সের জানাজা করছে।

 

তিনি বলেন, ‘দুই নম্বর রাজনীতি বহু করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের চিনেছে। আর দুই নম্বর রাজনীতি কইরেন না। জিয়াউর রহমান যে অপকর্ম করেছেন তার পরিণতি দেখেন, আপনাদের কী হয়। লাশ নিয়ে যেন কথা বলার সুযোগ না দেওয়া হয়।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৫৯ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com