শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘গৎবাঁধা’ বাজেটে বাতাসের ভেতর আশ্বাসের বাণী: সিপিডি

  |   শুক্রবার, ১৪ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট

‘গৎবাঁধা’ বাজেটে বাতাসের ভেতর আশ্বাসের বাণী: সিপিডি

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয় সীমা না বাড়ানোর সমালোচনা করেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। তাদের মতে, ‘যে আয় করে খায় তাদেরকে কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি, সুবিধা দেওয়া হয়েছে বিত্তবানদের।’

আগামী জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন হয়েছে বৃহস্পতিবার। নতুনত্ব ও চমকহীন এই বাজেট আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৮ শতাংশ বড়।

পরদিন শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেট পর্যালোচনা করে সিপিডি। সেখানে নানা বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

একেবারেই সংক্ষেপিত মূল্যায়নে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাজেটে কিছু গৎবাঁধা ভালো কথা আছে, কিন্তু কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি থাকলে তা শেষ হবে কবে সে নিয়ে কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি।’ তার মতে, বাজেটর বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করলে ‘বাতাসের ভেতরে আশ্বাসের বাণী’ পাওয়া যায়।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় সব খাতেই আয় এবং ব্যয়ের হিসাব বড় হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী করমুক্ত আয় সীমা আগের মতোই আড়াই লাখ টাকা রেখেছেন।

বাজেট বক্তব্যে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশে করমুক্ত আয় সীমা বলতে কিছু নেই। এই সীমা বাড়ানো হলে বহু করদাতাই কর সীমার বাইরে চলে যাবেন। তাই এটা অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। আবার সারচার্জকৃত সম্পদের সীমা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, যারা আয় করে তাদের জন্য সুবিধা বা প্রণোদনা দেয়া হয়নি। কিন্তু যারা সম্পদের ওপর নির্ভরশীল তাদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে, আমাদের কাছে এটি বোধগম্য নয়। এটি সরকারের নির্বাচনী চেতনার সঙ্গেও মিলে না।’

প্রস্তাবিত বাজেটে সারচার্জের এই কৌশলের পাশাপাশি সারচার্জ আরোপের নি¤œসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ওপর নিট সম্পদ থাকলে সারচার্জ প্রদান করতে হয়। সারচার্জ আরোপের এ নি¤œসীমা বৃদ্ধি করে ৩ কোটি টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

সিপিডির ফেলো বলেন, ‘আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, অনেক বিত্তশালী করদাতার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তারা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না। ফলে প্রদেয় আয়কর কম হওয়ায় তাদের তেমন কোনো সারচার্জও প্রদান করতে হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ কোটি বা তার অধিক নিট সম্পদ রয়েছে এমন করদাতাদের নিট সম্পদের ওপর দশমিক ১ শতাংশ অথবা প্রদেয় করের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করছি।’

২০১২ সালে প্রণীত ভ্যাট আইন আগামী অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ আইনে জটিলতা রয়েছে বলে মনে করে সিপিপি। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হবে বলে মনে করি। এ নিয়ে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ তৈরি হবে বলেও যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সিপিডি ফেলো মনে করেন, বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আসা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি। মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষায়, ১ শতাংশ স্বাস্থ্য এবং ২ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ বরাদ্দ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্যে সুখবর নয়।

বাজেটে পাঁচটি মূল খাত- যোগাযোগ, অবকাঠামো জ্বালানি, শিক্ষা ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তিতে ৭০ শতাংশ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দেবপ্রিয়ের মতে, একটি ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’

বাজেটে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। আর এই ঘাটতি পূরণে বিদেশি ঋণ ও অনুদান ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এই অর্থ না পেলে দুই লাখ দুই হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হুমকিতে পড়বে। এই কথাটি উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল রয়ে গেছে।’

বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা আরো স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করে সিপিডি। দেবপ্রিয় বলেন, ‘অঘোষিত আয় এবং বেআইনি আয়ের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে হবে।’

অর্থমন্ত্রী বড় বাজেটে বিশেষভাবে কর্মসংস্থানের কথা তুলেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি চাকরি দিতে চান তিনি। যুবকদের ব্যবসায় মনোনিবেশ করাতে চান।

তবে দেবপ্রিয়ের মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং সেবাখাত ভিত্তিক অর্থনীতি কোনো সুখবর নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারে সংস্কার নিয়ে বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে দেবপ্রিয়ের মতে দুই খাতেই পিুঁজিবাজারে কাঠামোগত সমস্যা ও সুশাসনের অভাব রয়েছে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আরো জোরাল বক্তব্য থাকা দরকার ছিল।

গতবছরের তুলনায় এই অর্থবছরে ধান-চাল সংগ্রহে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ছিল বলেও মনে করেন দেবপ্রিয়। তার মতে, এই কাজটি না করায় কৃষক উপকৃত হবে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:০৫ | শুক্রবার, ১৪ জুন ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com