বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুম খুনের সাথে শেখ হাসিনা জড়িত: লন্ডনে তারেক

  |   বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০১৪ | প্রিন্ট

received_m_mid_1401329943084_aa4653489d18762520_0

tarek-london meetingreceived_m_mid_1401329943084_aa4653489d18762520_0received_m_mid_1401329943084_aa4653489d18762520_0received_m_mid_1401329943084_aa4653489d18762520_0

লন্ডন: বিএনপি‘র সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছেন, দেশে গুম খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষাভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এখন আর কারো জীবনই নিরাপদ নয়। র‌্যাব পরিণত হয়েছে আওয়ামী রক্ষীবহিনীতে। তাই নিজে বাঁচতে, পরিবারকে বাঁচাতে, দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে কঠোর গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

লন্ডনে ইলফোর্ডের প্রভা ব্যাংকুইটিং অডিটরিয়ামে আয়োজিত “বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী“ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি‘র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দর্শকসারিতে বসেই পুরো অনুষ্ঠান শুনেন তারেক রহমান। তবে নেতাকর্মীদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন তিনি।

প্রায় আধাঘন্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান র‌্যাব বিলুপ্ত করা, পাকিস্তানী পাসেপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ফিরে আসা, গুম খুনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা, স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের সঙ্গে শেখ হাসিনারর দুঃশাসনের চিত্র, ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ। অনুুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা রাখেন: কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম এ মালিক, বগুড়া জেলা বিএনপি‘র সভাপতি ভিপি সাইফুলসহ দলের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান আরও বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে জনগণের অবস্থা এতটাই ভয়ংকর অবস্থায় পৌঁছেছে যে, জনগণ বলতে শুরু করেছে, “ওরা মানুষ নয়, আওয়ামী লীগ“। তিনি বলেন, এমন কোন অপকর্ম নেই যা আওয়ামী লীগ করতে পারে না। উদাহরণ দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, যেই আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে নেতা বানিয়েছে সেই শেখ মুজিব ৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে গলাটিপে হত্যা করতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি।

চাঞ্চল্যকর সাত গুমখুন নিয়েও কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, নারায়নগঞ্জে সাতজনকে গুম করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে জানলেও নিজদলের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে কোন পদক্ষেপ নেননি শেখ হাসিনা।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতির তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরেন তারেক। তারেক রহমান বলেন, এর প্রতিটি ঘটনা প্রমান করে দেশে চলমান গুম খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষাভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।

তারেক রহমান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর নির্মম হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকারীরা ধরা পড়বে। এরপর হাজার ঘন্টা পার হলেও এই ঘটনার রহস্য বের হয়নি। সেই সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সাগর রুনী হত্যা মামলার তদন্ত সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন শেখ হাসিনা। প্রশ্ন হলো শেখ হাসিনা নিজে একটি হত্যাকান্ডের তত্ত্বাবধান করার পরও মামলার রহস্য বের না হওয়ায় প্রমাণ করে “ডাল মে কুচ কালা হ্যায়“।

তিনি আরও বলেন, ২৭ এপ্রিল নারায়নগঞ্জে সাতজনকে দিনে দুপুরে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগেরই একজন অনির্বাচিত এমপি জানিয়েছেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি শেখ হাসিনাকে অপহরনের ঘটনা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে জানানোর পরও অপহৃতদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়ায় এইসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায় শেখ হাসিনা কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।

তারেক রহমান বলেন, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে গুলী করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিকেলেই শেখ হাসিনার অফিস থেকে হত্যাকান্ড সম্পর্কে বিরোধী দলকে জড়িয়ে বিবৃতি দিয়ে আইন শৃংখলাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়। অথচ ওই ঘটনায় যারাই গ্রেফতার হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মী। তাই শেখ হাসিনার এই অপতৎপরতা সম্পর্কে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের কথায় কাজে মিল নেই। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব তার ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে মাত্র পাঁচ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সবখানেই সফল হয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন। আজকে রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস সেক্টরের যে বিকাশ তাও শুরু হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজারও উন্মুক্ত হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের সময়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব জনগণের লড়াই সংগ্রাম এবং কঠিন আত্মত্যাগ দেখেননি, অথচ স্বাধীনতার পর পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে তিনিই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসে ক্ষমতায় বসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মা ভাই কিংবা আত্মীয় স্বজন হারানো যেইসব মানুষ ৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলেন তাদের সামনে শেখ মুজিব আসেন পকেটে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সাথে এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কি হতে পারে? তিনি বলেন, শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে মাত্র কয়েকমিনিটে গনতন্ত্রকে হত্যা করেন, নিজ দল আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করেন। জনগনকে ৭৪ এর দূর্ভিক্ষ উপহার দেন। তার শাসনামলে ঘরে বাইরে জনগনকে অনিরাপদ করে তোলা হয়েছিলো।

বক্তৃতায় তারেক রহমান ১৯৭৩ সালের ৬ জুলাই জাতীয় সংসদে দেওয়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বিবৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের জুন পর্যন্ত এই সময়কালে দেশে ২ হাজার ৩৫টি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৯শ’ ২৫ জন। তারেক রহমান বলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলেও একইভাবে গুম খুন অপহরণ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং সন্ত্রাস যেন একইমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তারেক রহমান বলেন, গুম খুণ অপহরণ এখন দেশের নিত্যদিনের চিত্র।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনে বিএনপির শাসনামলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো এলিট ফোর্স র‌্যাব। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিংশ্বাস ফেলেছিলো আর সন্ত্রাসীরা ছিলো আতংকে। অথচ আওয়ামী লীগের অবৈধ শাসনামলে র‌্যাবের ভয়ে সাধারণ মানুষ আতংকে আর সন্ত্রাসীরা নিরাপদে। এখন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পক্ষ হয়ে র‌্যাব টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করে, গুম অপহরণ করে, এই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বিরোধী দলকে দমনের জন্য কারো মেয়ের জামাই, কারো ভাই আত্মীয় স্বজন কিংবা দলীয় ক্যাডার দিয়ে র‌্যাবকে পরিণত করা হয়েছে শেখ হাসিনার রক্ষীবাহিনীতে। জনগণের কাছে আওয়ামী রক্ষীবাহিনীর বিকল্প হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই র‌্যাবের প্রতি জনগণের আর বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। এই র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা এখন জনগণের দাবী। অনুষ্ঠান শেষে র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও নির্মম নির্যাতন নিয়ে “ক্রসফায়ার“ নামে ১৪ মিনিটের একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। একইসঙ্গে প্রথম স্বাক্ষর দিয়ে “ডিজব্যান্ড র‌্যাব“ নামে দেশেবিদেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচী শুরু করা হয়।

আলোচনা সভায় কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ মালিক বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত রংহেডেড পার্সন আখ্যা দিয়েছিলো। তিনি বলেন, মানসিকবিকারগ্রস্থ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিকল্প নেই। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি‘র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম, ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্ট এর আহবায়ক এম এ মালিকসহ অনেকে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:০২ | বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com