শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গুম-খুনের দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না : খালেদা জিয়া

  |   মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০১৪ | প্রিন্ট

khaleda-ngonj

নারায়ণগঞ্জ, ১৩ মে  : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গুম-খুন ও হত্যার দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করা না হলে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানানো হবে।  মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজি এলাকায় অবস্থিত নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বাসভবন বুকগার্ডেনে স্বজনদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে প্রতিদিনই গুম-খুন হচ্ছে। খুন-গুমে নেমেছে র‌্যাব। ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই খুন-গুম বেড়ে যায়।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বলব না। কারণ তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেননি।’  তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় একজন মন্ত্রীর জামাতা জড়িত। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা এই খুনের দায় এড়াতে পারেন না। ‘নজরুল ইসলামের শ্বশুর আমাকে সব বলেছেন, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। সত্য কথা বলার কারণে যদি তাদের গায়ে কোনো আঁচড় লাগে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, র‌্যাব এখন জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এদের আর প্রয়োজন নেই। র‌্যাব যতোদিন থাকবে ততোদিন আতঙ্ক থাকবে। শান্তি থাকবে না।  তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, খুন, গুমের ঘটনার উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। না হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তারাই আপনাদের পতন ঘটাবে।

খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব গঠন করা হলেও তারা এখন গুম-খুনে জড়িয়ে পড়েছে। তাই এদের বিলুপ্ত করতে হবে। র‌্যাব-১১ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, র‌্যাব -১১ প্রধান নিজেকে খুব পাওয়ারফুল মনে করে। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর একজন মন্ত্রীর জামাই। তাছাড়া তাদের গুম-খুন ও অপহরণে জড়িত অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য তারা নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন। অবিলম্বে এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।

সরকারকে পদত্যাগের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আর নয় চোখের পানি, আর নয় গুম-খুন ও অপহরণ। এসব বন্ধ করতে সরকারকে বিদায় নিতে হবে। এরা ক্ষমতায় থাকলে গুম-খুন ও অপহরণ বন্ধ হবে না। তাই এই সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবে, ততক্ষণ প্রতিবাদ করতে হবে।

খালেদা জিয়া আক্ষেপ করে বলেন, আদালত এদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দিলেও এখন পর্যন্ত তারা গ্রেফতার হননি। তাদের শক্তি কোথায়? আমরা জানতে চাই। আজকের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে।  তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি র‌্যাব নূর হোসেনকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা গুম-খুন ও অপহরণ করবে আবার অপরাধীদের পার করিয়ে দেবে এদের এতো ক্ষমতা!

বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করে বলেন, নিহতদের স্বজনরা কারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তা প্রকাশ করায় তাদেরকে ‘থ্রেট’ করা হচ্ছে।  এই হত্যাকান্ড নিয়ে যারা কথা বলছেন এবং নিহতের পরিবারকে সরকারের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা এর দাবি করছি। তবে এদের গায়ে আচড় লাগলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে।  তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে ওইদিন মারা গেছেন ১১ জন। নৌকার মাঝি তারাও মানুষ। তাদের কথা বলা হচ্ছে না।

নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের স্ত্রীকে সান্তনা দেয়ার সময় খালেদা জিয়া তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমিও স্বামীহারা। স্বামী হারার বেদনা আমি বুঝি। তাকে হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে বিচার হলে সান্তনা পাওয়া যাবে। আমরা গুম-খুন নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার দেয়নি। নারায়ণগঞ্জে যা বলতাম তা এখন ডেমরায় বলবো। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।  এর আগে দুপুর ১২টার পর তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজি এলাকায় অবস্থিত নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বাসভবন বুকগার্ডেনে পৌঁছান।

বেগম খালেদা জিয়া নিহতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান। সেখানে নজরুল ইসলামের সঙ্গী নিহত তাজুল, লিটন, স্বপন ও জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  এরপর বেগম খালেদা জিয়া আইনজীবী চন্দন সরকারের বাসায় যান তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানাতে। সেখানে চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের পরিবারের সদস্যরা  উপস্থিত ছিলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরসহ বিএনপি দলীয় সাবেক এমপিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা করেন বেগম খালেদা জিয়া।  প্রসঙ্গত, নিহত ৭ জনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ১৪ মে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিল বেগম খালেদা জিয়র। কিন্তু ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিহতদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত বুধবার নারায়ণগঞ্জে না গিয়ে একদিন আগেই সেখানে যান বিএনপি চেয়ারপারসন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৪৬ | মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com