মুহম্মদ শফিকুর রহমান : অঙ্ক ভুল করলে পুরো নম্বর কাটা যায়। ২+২=৪ হয়, ২+২=৬ বানানোর চেষ্টা করা হলে সব নয়-ছয় হয়ে যায়। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতা ম্যাডাম খালেদাও ২+২=৬ বানাতে যেয়ে এখন লাল কার্ড খেয়ে নয়-ছয় হয়ে বসে আছেন। এবার তো টুর্নামেন্ট থেকে আউট হয়ে যাওয়ার পথে। একটার পর একটা টেস্টে যেভাবে হোয়াইটওয়াশ হচ্ছেন তাতে করে ঘরে বসে পরবর্তী টুর্নামেন্টের অপেক্ষা করা ছাড়া ম্যাডামের আর করার কিছু নেই। একটা কাজ আছে- ঘরে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখার সুবর্ণ সুযোগ। পরের টুর্নামেন্টের জন্য এখন থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। শেখ হাসিনার কাছে শিখতে পাবেন কিভাবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে এরশাদকে এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন ’৯০, ’৯৬ ও ২০০৬-এ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ কোন রকম টেনশন ছাড়াই ১০ম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, একটি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বিজিবি এবং সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হবে। বিজিবি তো তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে নেমে পড়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য (১) মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩; (২) মনোনয়নপত্র বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ২০১৩; প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩। অর্থাৎ নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলেছে। সংবিধাণ যে পথে নির্দেশ দিয়েছে সে পথে। এর মোকাবিলা করার নির্দেশনাও সংবিধানে রয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং এ জন্য দলীয় মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ-প্রদান পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা। যা স্বাধীনতার নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট অনুসরণ করে চলেছে। পক্ষান্তরে এদেশের রাজনীতির বিষবৃক্ষ বিএনপি একাত্তরের হায়েনা পাকি সামরিক জান্তার সহযোগী ক্রিমিন্যাল সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে ভাড়া করে, নাশকতা চালাতে যেয়ে নিজেই ব্যবহৃত, ব্যবহৃত হতে হতে এখন আর নিজের পায়ে হাঁটতে পারছে না। জামায়াত-শিবির যা করছে সব সমর্থন করতে হচ্ছে, দায়িত্ব নিতে হচ্ছে সম্পদহানির-জীবনহানির।
কী লাভ হলো ম্যাডাম খালেদার? বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ এবং জনগণের সম্পদ পুড়িয়ে জামায়াতের লাভ হতে পারে, বিএনপির নয়। জনগণ এরই মধ্যে নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। আর খালেদা ও তার তথাকথিত ১৮ দলীয় জোট কী করছে? তারা হরতাল অবরোধের নামে বোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে, রেল-বাস-ট্রাক, কার-টেম্পো জ্বালিয়ে ছাই করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। নিজের মুরুদ নেই আন্দোলন করার, তাই এমন এক অপশক্তিকে ভাড়া করেছেন অথবা তাদের অর্থের কাছে নিজেকে বিক্রি করেও কিছুই করতে পারেননি ধ্বংসযজ্ঞ করা ছাড়া। গত দুইদিন অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে ওদের সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন নাগরিক। প্রথমদিকে ৪৮ ঘণ্টার ডাক দিলেও পরক্ষণেই তা বাড়িয়ে ৭২ ঘণ্টা করা হয়েছে, অর্থাৎ তিন দিন-তিন রাত এবং এই তৃতীয় দিন রাতে আরও কত প্রাণ ঝরে যাবে, আরও কত সম্পদ পুড়বে, আরও কত রেল উপড়ে ফেলা হবে কে জানে? এই অপশক্তি এখন সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের গাড়ির ওপরও হামলা শুরু করেছে। অথচ আমরা যারা ছেষট্টি-ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কর্মী ছিলাম বা স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে মিলিটারি শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থেকে দেখে আসছি হরতাল-অবরোধে সংবাদপত্রের গাড়ি ও সাংবাদিক এবং ওষুধ-হাসপাতাল ও খাবারের দোকানপাট হরতাল অবরোধের আওতা বহির্ভূত থাকে। এদের ওপর হামলা করা হয় না। কিন্তু খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক আন্দোলনে এখন সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছে খাবারের দোকান, এ্যাম্বুলেন্সও? হিন্দু-বৌদ্ধদের মন্দির-বিগ্রহ দেখলেই ওদের হিংস্রতা বেড়ে যায়, ভাঙতে শুরু করে। ওদের টার্গেট হলো, স্বাধীনতার পক্ষের ভোট কমানো। কেননা, ওই ধর্মীয় মাইনোরিটিরা খালেদা ও তার সহযোগীদের ভোট দেয় না, এ জন্য যে তারা সাম্প্রদায়িক সেই পাকি আমল থেকেই।
আর এ কারণেই খালেদা জিয়ার আন্দোলন হরতাল-অবরোধকে রাজনৈতিক কর্মসূচী বলা যাবে না। এটিকে ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ড বলাই যুক্তি সঙ্গত।
আজকের প্রজন্মের কাছে জামায়াত-শিবিরের একটা পরিচয় তুলে ধরা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই জামায়াত-শিবিরের পরিচয় হলো এটি পবিত্র ধর্ম ইসলামের কথা বলে যত অধর্মের কাজ করে, ইসলামবিরোধী কাজ করে। এর অর্থ এটি একটি সাম্প্রদায়িক জঙ্গী রাজনৈতিক দল, কোন ধর্মীয় সংগঠন নয়। এই জামায়াত-শিবিরই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াত-ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করে রাজাকার-আলবদর-আল শামস ও দালাল শান্তি কমিটির ঘাতক দল। আজকের শিবির তাদেরই বিষাক্ত বংশধর। ঘাতক নর্দমার কীট, সুযোগ পেলেই নর্দমা থেকে ওঠে এসে মানুষকে কামড়ায়।
যে কারণে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত-শিবিরের জন্মদাতা (বাংলাদেশে) যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের এবং অন্যদের মামলার রায় (সর্বোচ্চ শাস্তি) প্রদানকালে জামায়াত-শিবিরকে ‘ক্রিমিন্যাল সংগঠন’ বলে মন্তব্য করেছেন। অতি সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারকগণ আরও সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, এটি হচ্ছে বিশ্ব স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক, ফ্যাসিস্ট হিটলারের গেন্টাপো বাহিনীর মতোই ফ্যাসিস্ট ঘাতক বাহিনী। এটি কোন রাজনৈতিক শক্তি নয়।
এমনকি পাক-ভারতে (অবিভক্ত) জামায়াতের জন্মাদাতা মাওলানা মওদুদীর ছেলে ফারুক মওদুদী সম্প্রতি বাংলাদেশে এসে বলেছেন, এটি এক বিস্ময় যে জামায়াত বাংলাদেশে রাজনীতি করছে? তিনি এও বলেছেন, তার বাবা (মাওঃ মওদুদী) মৃত্যুর সময় ছেলেদের (৯ ছেলে) বলে গেছেন কেউ যেন জামায়াত না করে?
কিন্তু তারপরও কেন জামায়াত রাজনীতি করছে এবং শিবিরের মতো গেন্টাপো বাহিনী বানালো এবং এখনও রাজনীতি করছে। করছে এ জন্য যে, এই শক্তি এখন বাংলাদেশের বাইরে কেবল পাকিস্তান নয়, আরও কিছু পাওয়ারের নৈতিক ও আর্থিক সমর্থন পাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশ এখন আর ‘তলাবিহীন ঝুড়িও’ নয়, ‘বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে-ঝড়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি বা অনাহারে-অর্ধাহারে ঝরা মৃত্যুর দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্যোবৃত্ত এবং খাদ্য নিরাপত্তার দেশ। এই তো এবার ৩ কোটি ৭৭ লাখ টন খাদ্য শস্য উৎপাদিত হলো। মানুষের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৬২০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১০৪৪ মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে; জিডিপি ৬+% এ চলেছে (যা খালেদা জিয়ার সময়- ৬% ছিল), এখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এইভাবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা ভারত-চীনকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের অবস্থান এখন আর্থ-সামাজিক ও নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য-শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে অল্প কয়টি দেশের পাশে শীর্ষে অবস্থান করছে। এটাই বিশ্ব মোড়ল বা তথাকথিত ধর্মীয় মোড়লদের সহ্য হচ্ছে না।
আমাদের এখন অনেকটা সময় পেরিয়ে আসা ক্লান্ত পথিকের মতো (তবে ন্যুব্জ নই, দুর্বলও নই, মুক্তিযোদ্ধারা কখনও ন্যুব্জ হয় না, দুর্বলও হয় না)। এই বয়সে মানুষের মধ্যে নস্টালজিয়ার জন্ম নেয়। আমাদেরও একা হলে এমনি নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকের কথা। চাঁদপুরে পাকি-আর্মি সারেন্ডার করে ৮ ডিসেম্বর ’৭১, আমরা লিডার (বিএলএফ) মমিন ভাই’র (আবদুল মমিন খান মাখন) নেতৃত্বে চাঁদপুর প্রবেশ করি ৯ ডিসেম্বর সকালে এবং সব গ্রুপ মিলে শহরের আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি যেহেতু পরীক্ষা শেষ না করেই মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছিলাম তাই ঢাকায় ফেরার জন্য সময়ক্ষেপণ করছিলাম। (অর্থাৎ ঢাকায় কখন পাকিরা সারেন্ডার করছে)। এমনি সময় ১৪-১৫ ডিসেম্বরের দিকে জানতে পারলাম পাকি মিলিটারির সহযোগী ঘাতক আল শামস-আল বদররা আমাদের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছে, তাদের টার্গেট ছিল বাংলাদেশ তো স্বাধীন এবং শত্রুমুক্ত হচ্ছেই, এই তো আর ঠেকানো গেল না। তবে যাতে বুদ্ধির দৈন্যের কারণে এগোতে না পারে সে জন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে হবে। তাই করছে তারা। ঢাকায় সারেন্ডারের পর আমার প্রিয় হল হাজী মুহম্মদ মহসীন হলে এসে প্রথমেই জানতে পারলাম, আমাদের প্রিয় হাউস টিউটর আজীবন ব্যাচেলর হিস্টরির অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিনকে আল বদররা বাসায় থেকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বধভূমিতে হত্যা করেছে। আর্টস ফ্যাকাল্টিতে এসে জানলাম আমার সরাসরি শিক্ষক প্রফেসর ড. মুনীর চৌধুরী, প্রফেসর ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, প্রফেসর ড. আনোয়ার পাশা, ক্যাম্পাসের প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর ড. জিসি দেব, প্রফেসর ড. গুহ ঠাকুরতা, আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাঃ আলীম চৌধুরী এমনই দুই ডজনের মতো ক্যাম্পাস শিক্ষককে হত্যা করেছে। আমি ১৯৭০ সাল থেকে দৈনিক ইত্তেফাকে পার্টটাইম জব করতাম বাড়তি পয়সা রোজগারের জন্য, তারচেয়েও বেশি সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহের কারণে। সেই সুবাদে ঢাকা সাংবাদিকদেরও কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। যেমন ইত্তেফাকের বার্তা ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজউদ্দিন হোসেন (যিনি আমাকে ইত্তেফাকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে জব করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন), তাকেও ঘাতকরা হত্যা করেছে, হত্যা করেছে দৈনিক সংবাদের কার্যনির্বাহী সম্পাদক প্রখ্যাত লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার, আ.ন.ম গোলাম মোস্তফা, খন্দকার আবু তালেবের মতো প্রখ্যাত এবং কলমের মাধ্যমে দুনিয়া কাঁপানো সাংবাদিকদের। পাকি হানাদার বাহিনী শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করে, অনেক ছাত্র-শিক্ষিক-কর্মচারীকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে আমার বন্ধু এবং তৎকালীন দৈনিক আজাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার চিশতি শাহ হেলালুর রহমানকেও হত্যা করে। ওরা ধর্ষণ করে হত্যা করে আমাদের ছাত্রী বোনদের, বাংলার-মা বোনদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে তিনি সেই আল বদর-আল শামস বাহিনী জন্মদাতা গোলাম আযম এবং এ বাহিনীর প্রধান নিজামীর (বিচার রায় ঘোষণার অপেক্ষায়), মুজাহিদ এবং চৌধুরী মঈনুদ্দিন বা আশরাফুজ্জামানদের বিচার করেছেন, এখন বিচারের রায় কার্যকর করার কাজ চলছে।
আমাদের এবং আজকের প্রজন্মের উচিত হবে জাতির জনকের ভাষায় “তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে….” এই নির্দেশ অনুযায়ী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা। ভূমিকা পালন করা। বিশেষ করে, আমরা যারা সেদিন যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ পরিচালনা করেছি, যুদ্ধ সংগঠন করেছি, তাদের আবারও ভূমিকা পালনের সময় বয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভাবতে হবে আমরা কি এখনও ঘরে বসে থাকব নাকি আমাদেরও কিছু করার আছে, তা করব। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আমাদের সন্তানরা-রাজপথে আজ সময় এসেছে তাদের পথে হাঁটার।
অবাক হই যখন দেখি, আমাদের তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী টকশোতে বসে ভুলে যান আজ যে সংবাদপত্রের গাড়ি বা সাংবাদিকদের ওপর হামলা হচ্ছে, তা তো একাত্তরের সেই ঘাতক ফ্যাসিস্ট আল বদর-আল শামসের নির্দেশে, তাদেরই বিষাক্ত বংশধরদের কাজ। কখনও-সখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সিপিবির সরকারবিরোধী কথাবার্তা ভূমিকাও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পক্ষে চলে যাচ্ছে। সিপিবি অশিক্ষিত মানুষের দল নয়, যে তারা বুঝছেন না। তারপরও সিপিবি নেতারা কেন এই আত্মঘাতী ভূমিকায় অবতীর্ণ সেটাই এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে?
আমি মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর কথা বলব না। তার মেধা-মনন সম্পর্কে আমার মতো অনেকেই জানেন। আমি তার কথায় অবাক হই না। তিনি ড. মুনতাসীর মামুনের বিষোদগার করেছেন তাতেও আমি অবাক হইনি, তিনি তো বঙ্গবন্ধুর পরিবার নিয়েও কথা বলার ধৃষ্টতা দেখান। আমি অবাক হই দেশের প্রখ্যাত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের কথা শোনে। অবশ্য তিনি রাজনীতি বিশেষজ্ঞ নন সংবিধান বিশেষজ্ঞ বা আইনজ্ঞ হলে রাজনীতি বিশেষজ্ঞ হবেন এমন কথা নেই।
ড. কামাল হোসেনকে চিনি সেই ষাটের দশক থেকে। তখন পাকি সামরিক জান্তা আইয়ুব খা আগরতলা ষড়যন্ত্র (তথাকথিত) মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন। তখন ক্যাম্পাসের একজন ছাত্রকর্মী হিসেবে দেখেছি যে কজন আইনজীবী বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নাম বেশি শোনতাম। এরাই সেদিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনী লড়াইয়ে যোগ দেয়ার জন্য প্রখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন।
ড. কামাল হোসেনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যার পর, যখন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টার হওয়ার সুবাদে। এই ড. কামাল হোসেনকে একবার আওয়ামী লীগ বিএনপির বিচারপতি আবদুস সাত্তারের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তখন দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁকে নিয়ে সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। ইত্তেফাকের রিপোর্টার হিসেবে আমি তাদের সহযাত্রী হওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। তখন এই ড. কামাল হোসেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাংলা বলতেন, অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারণ ঠিক হতো না। তখন নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গাড়িতে বসে অথবা কোথাও অবস্থানকালে অবসরে তাকে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার শেখায় সহযোগিতা করার দায়িত্ব পালন করেছিলাম।
তারপরের ইতিহাস সবার জানা। বঙ্গবন্ধু তাকে কোথা থেকে কোথায় তুলেছিলেন। শেখ হাসিনাও তাকে কোন্ পর্যায়ে তুলে নিয়ে মর্যাদার আসনে বসাবার চেষ্টা করেছিলেন, সে সব জাতি ভালভাবেই জানেন।
আমাদের অবাক করে যখন দেখি তিনি বলছেন বর্তমান সঙ্কট নিরসনে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন! কি করেছে শেখ হাসিনা? শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে দলীয় প্রধান হন আর খালেদা সাত্তারের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে দলের চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তো সংবিধানই অনুসরণ করছেন। বরং খালেদা জিয়াই সংবিধান লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসী যুদ্ধাপরাধীদের মাঠে নামিয়েছেন, মানুষ হত্যা করাচ্ছেন, রেলসহ যানবাহনে নাশকতা করাচ্ছেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করাচ্ছেন অথচ ড. কামাল হোসেন কিন্তু খালেদা জিয়াকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন না, জামায়াত-শিবির ত্যাগ করার বা নাশকতামূলক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন না। তার মানে তাঁর পরামর্শ খালেদা জিয়া ও তার গেন্টাপো বাহিনীরই পক্ষে যাচ্ছে। ড. কামাল হোসেন নিশ্চয়ই জানেন এবং বোঝেন যে, খালেদা জিয়া জামায়াত ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলেই… এ কারণেই সিপিবির মতো ড. কামাল হোসেনও এক বড় প্রশ্ন?
Like this:
Like Loading...
Related