বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যে দীর্ঘ ১৮ মাস ঝুলে গেলো বির্জা খালের অবৈধ ব্রীজ উচ্ছেদ কার্যক্রম :   সেনাবাহিনীর হস্থক্ষেপ কামনা   

  |   শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট

কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যে দীর্ঘ ১৮ মাস ঝুলে গেলো বির্জা খালের অবৈধ ব্রীজ উচ্ছেদ কার্যক্রম :   সেনাবাহিনীর হস্থক্ষেপ কামনা   

শিব্বির আহমদ ওসমান, চট্রগ্রাম থেকে  : কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের জালে আটকে গেলো পূর্ব বাকলিয়ার বির্জা খাল ভরাট করে নির্মিত অবৈধ ব্রীজটির উচ্ছেদ কার্যক্রম। কথিত এহসান প্রপার্টিজ এর মালিক জনৈক আবু আলমের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার কুমানসে বাকলিয়ার বির্জা খাল দখল ও ভরাট করে ১২০ ফুট কনক্রিট পাইলিং এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর আদলে নির্মিত জ্বলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ অত্র অবৈধ ব্রীজটি উচ্ছেদ করার জন্য  ২০১৩ সাল থেকে স্থানীয় অধিবাসীরা নাগরিক অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোল(নাপসা) নামিয় সংগঠনের ব্যানারে যুগপথ আন্দোলন গড়ে তোলে। অত্র অবিযোগে সংগঠনের নেতৃত্বে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম পরিবশে অধিদপ্তর বরাবরে শ্বারকলীপিও প্রদান করা হয় তৎকালীন সময়ে।   ফলশ্রুতিতে গত ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর উক্ত ব্রিজ নির্মাণের অনুমতি বাতিল করে ব্রিজটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের দাবীর মুখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব আ.জ.ম. নাছির উদ্দিনের নির্দেশে ২০১৭ সালের  ১৬ জানুয়ারি  চসিকে’র একজন সিটি ম্যাজিস্ট্রেট  ব্রীজের কিছু অংশ ভাঙ্গার ফটোসেশন  করে অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে ব্রীজ ভাঙ্গার কার্যক্রম হতে পিছু হঠে।

দীর্ঘ ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও  অদৃশ্য ও রহস্যজনক কারণে  ব্রীজের অবশিষ্ঠাংশ  ভাঙা হচ্ছে না। উল্টো ওই ব্রিজটি যাতে ভাঙা না হয় সেজন্য এহসান প্রপার্টিজ ও এর পোষ্য সন্ত্রাসীরা নানা জায়গায় জোর তদবির চালাচ্ছে। ফলে সিটি কর্পোরেশন শুধু অনুমতি বাতিলের আদেশ দান এবং লোক দেখানো একটু ভাঙ্গার কার্যক্রমের ফটোসেশন করেই চুপ করে আছে প্রায় ২ বছর। এলাকাবাসীর অভিযোগ,  মেয়রকে অন্ধকারে রেখে  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ ও চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিগয় ঘুষখোর ও দুর্নিতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রায় ৫ কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে বির্জা খালের ব্রীজ ভাঙ্গার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে এহসান প্রপার্টিজ সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে প্রতিবেদককে এমনই অভিযোগ করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও আন্দোলনকারী প্রতিষ্ঠান নাগরিক অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন-নাপসা’র নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম মহানগরীর বৃহত্তর জন সাধারণের বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশনকারী অন্যতম প্রধান বির্জা খালের প্রবাহমান প্রাকিৃতিক জোয়ার ভাটার গতিরোধ কওে ১২০ ফুট কনক্রিট পাইলিং এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নৌকা চলাচলের পথ বন্ধ করে পরিবেশ বিপর্যয়কারী খালের প্রাকৃতিক অবকাঠামো নষ্ট করে নির্মিত অবৈধ  ব্রীজাটি অবিলম্বে অপসারণ করে বৃহত্তর বাকলিয়াকে জ্বলাবদ্ধতামুক্ত করার জোর দাবী জানায় বাকলিয়াবাসী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবৈধ ব্রীজটির উচ্ছেদ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান নাপসা’র নির্বাহী পরিচালক আলমগীর নূর জানান, “ব্রীজটি নির্মাণের ফলে পুরো খালের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইতোমধ্যে বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। একই কারণে এই খাল দিয়ে বাণিজ্যিক নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও, খাল ভরাট ও দখল করে অবৈধভাবে ব্রীজ নির্মাণ এবং খালের পাড়ে পাড়ে দোকান ঘর তৈরী করে খালটি পুরোপরি গ্রাস করে নিচ্ছে স্থানীয় ও বহিরাগত ভূমিদস্যুরা। ফলে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে গলা সমান পানিতে তলীয় যাচ্ছে নগরীর বৃহত্তর বাকলিয়াসহ আশপাশের এলাকা। যদিও গত ২/১ দিন ধরে চউক ও সেনাবাহিনীর নির্দেশে খালের পাড়ে নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিচ্ছে স্ব স্ব মালিক ও ভূমিদস্যু গং। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উক্ত অবৈশ ব্রীজটি অপসারণ করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছেনা চসিক কিংবা সিডিএ’র পক্ষ থেকেু। এতে আমরা ধারণা পোষণ করতে সিডিএও সেই সিটি কর্পোরেশনের পথেই হাঁটছে।

তিনি আরও বলেন, বাকলিয়াবাসীকে জ্বলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে অবিলম্বে উক্ত অবৈধ ব্রীজ অপসারণ করে সকল ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদপূর্বক বলির হাট হয়ে  মোজাফ্ফর রোড দিয়ে কর্নফুলির মোহনা পর্যন্ত পুরো খালটি খনন করার  জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃক পক্ষের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব আবদুস ছালাম এবং খাল-নদী-নালা খনন ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর জোরালো ও কার্যকর হস্থক্ষেপ কামনা করছি। অন্যতায়, এলাকাবাসী সাথে নিয়ে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের দারস্থ হব।

বাকলিয়াবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রহস্যজনক নিরবতা ও এহসান প্রপার্টিজ এর মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে চোখের সামনে বিলীন হতে চলেছে চট্টগ্রাম নগরবাসীর বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশনকারী অন্যতম প্রধান বাকলিয়াস্থ বির্জা খালটি। এ বিষয় নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। যেকোন মুহূর্তে অবৈধ ব্রীজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংখ্যা বিরাজ করছে। এদিকে ব্রীজ ভাঙ্গার আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে নাপসা’র নির্বাহী পরিচালক আলমগীর নূরকে প্রতিণিয়ত ব্যাপক হুমকি দিয়ে চলেছে অবৈধ ব্রীজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এহসান প্রপার্টিজ ও এর পোষ্য সন্ত্রাসী গং। নিজের নিরাপত্তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন আলমগীর নূর। এদিকে অত্যাসন্ন ভরা বর্ষার পূর্বেই জনদুর্ভোগ লাঘবে ওই ব্রিজটি দ্রুত ভেঙ্গে অপসারণ করার জোর দাবি জানিয়েছে বাকলিয়াবাসী ।

প্রসঙ্গতঃ জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম এর এক লিখিত নির্দেশে এর প্রেক্ষিতে বাকলিয়া ভূমি অফিস কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদন মতে, স্বারক নং-২৯৭/বাকলিয়া ভূমি অফিস, সদর এর তথ্য অনুযায়ী বির্জাখালের বিএস দাগ নং- ১৯২৩৩,১৮২৩৫, থানা-পাঁচলাইশ, মৌজা-বাকলিয়া, যা ডেপুটি কমিশনার, চট্টগ্রাম এর নামে ১ নং খাস খাতয়ানভূক্ত খাল শ্রেণীর সরকারী সম্পত্তি। জেলা প্রশাসক/কালেক্টর বাহাদুর, চট্টগ্রামের নামে সরকারী ১ নং খতিয়ানের জমি হিসেবে কালেক্টর বাহাদুর চট্টগ্রাম এর অনুমোদন ব্যতীত শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের বিতর্কিত অনুমতি নিয়ে অবৈধভাবে ব্রীজ নির্মাণে করে খালের প্রাকৃতিক অবকাঠামো নষ্ট করায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এহসান প্রপার্টিজ এর স্বত্তাধীকারী আবু আলমসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনগত নেওয়া প্রয়োজন বলে রিখিতভাবে জেরা প্রশাসক চট্টগ্রামকে জানিয়েছেন বাকলিয়া ভূমি অফিস।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:২৯ | শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com