| শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
আব্দুল লতিফ রঞ্জু,পাবনা প্রতিনিধি : জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও রাসায়নিক সারসহ কৃষি উপকরণের অস্বাভিবক মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের নায্যমূল্য না পাওয়ার কারনে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চলতি মওসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হওয়ার আংশকা করা হচ্ছে। মূল্য বৃদ্ধির কারনে কৃষকরা বোরো চাষাবাদ কমিয়ে দিয়ে ভুট্রা, গমসহ অন্যান্য কৃষি আবাদের প্রতি ঝুকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলম জানান, এ মৌসুমে উপজেলায় ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১৩ হাজার ১ শত হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২ শত হেক্টর। গত বছর এ লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১২ হাজার ৪ শত হেক্টর, আবাদ হয়েছিল ১৩ হাজার ১ শত হেক্টর। গত বছর উপজেলায় ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯ শত আর বিদ্যুত চালিত ৯৭৫টি। এবছরে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের অনেক মালিক এখনো মাঠে নামেনি। গত বছর ভূট্রা আবাদ হয়েছিল ১৭০ হেক্টর। চলতি মওসুমে কৃষি বিভাগ ভূট্রা চাষের লক্ষ্য মাত্রা ১৮০ হেক্টর নির্ধারণ করলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত ফেব্রুয়ারী শেষ পর্যন্ত ৩৫৭ হেক্টর জমিতে ভূট্রা চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে উঁচু নিচু এমন কোন পতিত জমি নেই যেখানে ভূট্রা লাগানো হয়নি। সব চেয়ে বেশী ভূটার আবাদ হয়েছে হান্ডিয়াল ইউনিয়নে। কয়েক জন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সরকার এমনিতে ইউরিয়া সারের মূল্য বস্তা প্রতি এক লাফে ৬ শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় উন্নীত করেছে। টি, এস, পি ১০৫০ টাকা, ড্যাপ ১৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে তদুপরি ডিজেলের দাম ৪ দফায় বৃদ্ধি করে ৪৪ থেকে ৬১ টাকা করা হয়েছে। এর প্রভাব কৃষকদের ওপর পড়ছে। প্রতি লিটার ডিজেল কিনতে কৃষকদের অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ১৭ টাকা। এছাড়াও গ্রাম এলাকায় কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশী দামে ডিজেল কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। এ ছাড়াও ভর্তুকী কমাতে কৃষি খাতে ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ায় বিদ্যুৎ নির্ভর সেচ যন্ত্রের মালিকদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হবে। এ অবস্থায় ইরি-রোরো চাষাবাদ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ ডিজেল/বিদ্যুৎ ছাড়া এ ফসল ফলানো একবারেই অসম্ভব। শুধু সার ও ডিজেলই নয় অন্যান্য কৃষি উপকরনের মূল্য ও বৃদ্ধি পেয়েছে। সবশেষে বিদ্যুতের দামও বাড়বে বলে সরকার থেকে বলা হচ্ছে। উৎপাদিত কৃষি পন্য ধান, গম, পাট, পেয়াজ, রসুন, খেশারীর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা কৃষক। বর্তমানে ইরি-বোরো ধানের মূল্য প্রতি মন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, আমন ধানের মূল্য প্রতি মন ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা, অন্যান্য শাক সবজির মূল্যও নামমাত্র। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছেনা।
উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের জগতলা গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে ইরি-বোরো বর্গা চাষ করেছেন। ২০ মন হারে ধান হলেও শ্যালোর ভাগ বাদ দিয়ে তিনি ৩৭ মন ধান পেতে পারেন। জমির মালিককে অর্ধেক দিলে তার ধান থাকবে সাড়ে ১৮ মন। অথচ এ জমির ধান কাটা পর্যন্ত তার যে খরচ হবে সে টাকা উঠবেনা বলে জানান। লাভ হবে না তবে কেন আবাদ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জমির পেছনে দিনে দিনে খরচ করে এক সাথে ফসল পাই যা দিয়ে নিজেদের খাবার এবং গরুর খাবার জোগাড় করি। সার ডিজেলের দাম বেশী হওয়ায় লাভের চেয়ে ক্ষতির আংশকা করছেন অনেক কৃষক। এছাড়া শ্রমিকের পেছনে আগের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় তো আছেই।
Posted ১০:৪২ | শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin