বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

কী নির্মম, নিষ্ঠুর: নরসিংদীতে ঘুম পাড়াতে নিয়ে ছোট তিন ভাইবোনকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা!

  |   বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

কী নির্মম, নিষ্ঠুর: নরসিংদীতে ঘুম পাড়াতে নিয়ে ছোট তিন ভাইবোনকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা!

ঘুম পাড়ানোর কথা বলে ছোট তিন ভাইবোনকে ঘরে নিয়ে পর্যায়ক্রমে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে তাদের মেজ ভাই। রুবেল মিয়া (২৩) নামের ওই পাষণ্ডের ধারালো অস্ত্রের কোপে তার বড় ভাইও গুরুতর জখম হয়েছেন। ঘটনার পর সে আত্মগোপনে যায়। গতকাল বুধবার সকালে স্থানীয়রা রুবেলকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে আলোকবালীর পূর্বপাড়া পুনের বাড়িতে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আটক রুবেল এ বিষয়ে এলোমেলো কথা বলেছে। তিন ভাইবোন হত্যায় নরসিংদী মডেল থানায় মামলা হয়েছে।

খুন হওয়া তিন ভাইবোন হলো, পূর্বপাড়ার আবুল কালাম মিয়ার মেয়ে মার্জিয়া (৪), মরিয়ম (৬) ও ছেলে ইয়াছিন (১০)। আহত বড় ভাই আতিকুর রহমান (২৫) স্থানীয় আলোকবালী দারুল সুন্নাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে তিন শিশুর লাশ উদ্ধারের পরই ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্বপাড়ার আবুল কালাম নৌকার মাঝি। তার পাঁচ ছেলেমেয়ে। মেজ ছেলে রুবেল তার সঙ্গে একই কাজ করে। টাকা উপার্জন করায় অল্প বয়সেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বড় ছেলে মুফতি আতিকুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। একই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করত ছোট ছেলে ইয়াছিন। রুবেল যা উপার্জন করত তা তার বাবা নিয়ে নিতেন। তবে সংসারে বেশি কর্তৃত্ব ছিল আতিকুলের। এসব নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত মঙ্গলবার এশার নামাজের পর রুবেল তার মায়ের কাছে গিয়ে বলে, ছোট বোন মার্জিয়া রাতে তার সঙ্গে ঘুমাবে। এ কথা বলে সে তাকে পাশের ঘরে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এর পর তার লাশ কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। একই কথা বলে মেজ বোন মরিয়মকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর ওই কাঁথার নিচে তার লাশও রাখে রুবেল। এর পর সে পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসায় গিয়ে ছোট ভাই ইয়াছিনকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। তাকেও একই কায়দায় হত্যা করে। তিন ভাইবোনের লাশ কাঁথার নিচে রেখে কক্ষের আলো নিভিয়ে বাইরে এসে রাতের খাবার খায় রুবেল। এর পর সে ফের বড় ভাই আতিকুরকে ডাকতে মাদ্রাসায় যায়। তাকে কুপিয়ে আহত করার পর রুবেল পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরই আবুল কালামের স্ত্রী কুলসুম বেগম ঘরে গিয়ে তিন সন্তানের লাশ দেখতে পান। সকালে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।

চিকিৎসাধীন আতিকুর বলেন, আমি মাদ্রাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে মা অসুস্থ, এ কথা বলে আমাকে ডেকে তোলে রুবেল। পরে মাদ্রাসার কাছেই মসজিদের সামনে আমাকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে। পরে জানাজানি হয়, আমাকে কোপানোর আগে তিন ভাইবোনকে হত্যা করেছে রুবেল।

আটকের পর স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল মিয়া জানায়, বড় ভাই আতিকুর অবিবাহিত। তার বিয়ের জন্য রুবেলকে মেয়ে দেখতে যেতে বলা হয়েছিল। রুবেলের ধারণা, ভাইয়ের বিয়ে হলে নতুন বউ কোনো কাজ করবে না। এ জন্য সে মেয়ে দেখতে যেতে অস্বীকার করে। ছোট তিন ভাইবোনকে হত্যার কারণ সম্পর্কে সে বলেছে, এটা তার ভুল হয়েছে। তারা কোনো পাপ করেনি, তাদের কোনো অন্যায় নেই। হত্যার কারণ সম্পর্কে কিছু বলেননি সে।

আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু বলেন, শুনেছি রুবেল মানসিকভাবে অসুস্থ। এখনও এ হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানতে পারিনি।

নরসিংদী সদর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, নিহত তিন শিশুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনের জন্য কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রুবেলকে আদালতে হাজির করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম বলেন, আটকের সময় রুবেল খুবই শান্ত ছিল। তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। আশা করছি, জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:৫৬ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com