শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় সেবা দেওয়া চিকিৎসকরা হোটেল ৭১ এ টয়লেটও পরিষ্কার করতেন

  |   মঙ্গলবার, ২৬ মে ২০২০ | প্রিন্ট

করোনায় সেবা দেওয়া চিকিৎসকরা হোটেল ৭১ এ টয়লেটও পরিষ্কার করতেন

মরণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাচ্ছে না।দেশে প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সারি, যোগ হচ্ছে নতুন নতুন আক্রান্ত মানুষ। করোনার সঙ্গে মানুষের লড়াই জীবন-মৃত্যুর। এ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। তারাই করোনাভাইরাসকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছেন। রাজধানীর হোটেল ৭১ থাকা কয়েকজন চিকিৎসক নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান এ প্রতিবেদকের কাছে।

তারা জানান, হাসপাতালে আমরা টানা সাতদিন দায়িত্ব পালন করতাম। এরপরে যখন হোটেলে আসতাম তখন এখানে অন্যান্য কাজও করতে হতো। যে সব কাজ হোটেল স্টাফদের করার কথা। কিন্তু রুম সার্ভিসের জন্য ডেকে কাউকে পাওয়া যেতো না। রুমে ময়লা হয়ে থাকলেও পরিষ্কার করার জন্য কাউকে পেতাম না। টয়লেট অপরিষ্কার হয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসত না। আমরাই বাধ্য হয়ে বলতাম, অন্তত একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা ব্রাশ দেন যাতে রুম ও টয়লেট পরিষ্কার করতে পারি। হাসপাতালে ডিউটি শেষে হোটেলে আসার পর এভাবে আমরা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঝাড়ু দেওয়া শেষে টয়লেটটাও পরিষ্কার করতাম।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকরা বলেন, হোটেলে তো টাকা দিয়েই আমাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে অন্তত দায়িত্ব পালন শেষে চিকিৎসকরা কোয়ারেনটাইনে থাকতে পারেন। কিন্তু সেখানে কোনো রুম সার্ভিস না পেয়ে আমরা এখন বাসায় থেকেই কোয়ারেনটাইন করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে আমরা সাধারণত রোস্টার পলিসিতে দায়িত্ব পালন করে থাকি। রোস্টার শেষে আমাদের হোটেলে এসে কোয়ারেনটাইনে থাকতে হয়। কিন্তু এই একটা হোটেলে আমাদের নানারকম বিমাতাসুলভ আচরণের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়। আমরা যখন হাসপাতাল থেকে দায়িত্ব পালন শেষে হোটেলে আসি তখন এমন একটা আচরণ করা হতো যেন আমরা আসলে কাঙ্ক্ষিত কেউ না। এরপরে আমাদের রুমে চলে যেতে হয়। সেখান থেকে আমাদের বারান্দা বা ছাদে যেতে নিষেধ করা হয়। সেটাও আমরা মেনে নিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের রুমের বাইরে খাওয়া রেখে যেতো। কিন্তু সেই খাওয়াটা দেখা যেত ঠান্ডা হয়ে থাকা। তাও আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু এক বিছানার চাদরে কয়দিনই বা কাটানো যায়। রুমেও দেখা যেতো প্রচুর ডাস্ট জমে থাকতো। সেই জন্য আমরা তখন তাদের অনুরোধ করি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা কোনো কিছু দেওয়ার জন্য যাতে রুমটা অন্তত পরিষ্কার রাখা যায়। পরে সেটা দিয়ে নিজেরাই রুম পরিষ্কার করি। টয়লেটও ময়লা হয়ে থাকতো। সেগুলো পরিষ্কার করেই নিজেরা সেখানে থাকতাম। আর এ বিষয়ে আমরা আমাদের স্যারদের কাছে জানিয়েছিলাম।’

তিন সপ্তাহ হোটেল ৭১ এ এমন পরিস্থিতিই ছিল বলে জানান এই চিকিৎসক। তবে বর্তমানে তিনি বাসায় থেকে কোয়ারেনটাইন করছেন।

আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে টাকা দিয়েই তো হোটেল ঠিক করা হয়। কিন্তু সেখানে রুম সার্ভিস না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের কলিগরা অন্যান্য হোটেলেও থাকে। সেখানে তাদের কাছে প্রথম এক থেকে দুইদিন টুকটাক অভিযোগ পেলেও এরপরে কোনো সমস্যাতে তাদের পড়তে হয়নি। অন্যদিকে এই হোটেল ৭১ এ আমাদের নিজেদের রুম পরিষ্কার করতে হতো। একই সঙ্গে ময়লা হয়ে থাকা টয়লেটও পরিষ্কার করতে হতো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার চাইতে অন্তত নিজেদের বাসায় গিয়েও থাকা ভালো। আর তাই আমরা সেই কথাই জানিয়েছিলাম আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এখন দেখি ওনাদেরই বদলি করে ফেলা হলো।’

নানাভাবে বলার পরও তিন সপ্তাতেও হোটেল ৭১ এ সেবামানের কোনো পরিবর্তন দেখতে পাননি চিকিৎসকরা। এছাড়া ঠিকমতো তাদের খাবারও দেওয়া হতো না।

চিকিৎসকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় হোটেল ৭১ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ২৪ মে দুপুর ১টা ৪৪ মিনিটের দিকে হোটেলের রিসিপশনে যোগাযোগ করলে মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমাদের ম্যানেজারকে আপনার নম্বর দিয়ে রাখছি। উনি যোগাযোগ করবেন।

এ সময় তিনি প্রতিবেদকের নাম, পদবি ও মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখেন।

দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরে কেউ যোগাযোগ না করলে বিকেল ৪টা ১৬ মিনিটে আবার যোগাযোগ করা হয় হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

এ সময় মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যেহেতু এখন ঈদ। তাই এখন কাউকে পাওয়া যাবে না। ঈদের পরে উনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসকদের অভিযোগ বিষয়ে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এটা আসলে ম্যানেজমেন্ট থেকেই বলতে পারবে।’

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় হোটেল ৭১ এর জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গেও। তবে তিনি ফোন ধরেননি। একই সঙ্গে এসএমএস দেওয়া হলেও কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বদলি একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসনিক কারণেই তাদের বদলি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে বিস্তারিত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

হোটেল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেখা হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, শনিবার (২৩ মে) মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী তুহিনকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজে এবং নাক, কান গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটুকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও কোভিড-১৯ চিকিৎসার ফোকাল পারসন সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান কচিকে জামালপুরে বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোত্তালিব হোসেনকে ওএসডি করা হয়েছে।পূর্বপশ্চিমবিডি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:০৭ | মঙ্গলবার, ২৬ মে ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com