বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘এ বাজেট রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার’

  |   শুক্রবার, ০৬ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট

‘এ বাজেট রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার’

debopreo

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজেট যে কোনো সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার। এ মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সংস্থার সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বিরাজমান অর্থনেতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাজেট। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মূদ্রার বিনিময় হার ভালো, পণ্যের দাম কমার মতো যেমন ইতিবাচক কিছু রয়েছে। তেমনি বিনিয়োগের পতনের ধারা, রাজস্ব আদায়ের বড় ধরনের ঘাটতি, ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতাও রয়েছে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ‘ব্র্যাক সেন্টার ইন’ এ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বাজেট পরবর্তী ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এ বাজেটের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে বর্জন করা হয়েছে। ৭ম ও ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কোনো ইঙ্গিতও ছিল না বাজেটে। নির্বাচিত সরকারের প্রথম বাজেট হিসেবে বড় ধরনের উদ্দীপনামূলক কিছু ছিল না।

এই অবস্থায় আর্থিক সঙ্গতি ফিরিয়ে নিয়ে আসা, অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরণ পুনর্জীবিত করা, ব্যক্তি বিনিয়োগ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তাবনা থাকা উচিত ছিল।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছেন, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। অর্থাৎ নীরবতার মধ্য দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সম্মতি দিয়েছেন তিনি। এটি ঠিক হয়নি। এটি বৈপরীত্যের নীতি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে কর রেয়াতের যে মাত্রা রয়েছে, তা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। মূল্যস্ফীতির ধারার সঙ্গে মিল রেখে এটি আরো ৩০ হাজার টাকা বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করেন আর যিনি তিন কোটি টাকার ওপরে আয় করেন, তাকেও একই আয়কর দিতে হবে। এটি ইতিবাচক নয়।

কর কাঠামো প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কর কমানো, উৎসে কর বৃদ্ধি যৌক্তিক। পেছনে যাতে তুলনা করতে পারি, সে জন্য সময়ভিত্তিক ধারাবাহিক টাইম সিরিজ তৈরি করে ফেলা উচিত। ভালো আবহাওয়া ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভালো বাজেটের জন্য প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আগামী দিনে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ এই দুটি কারণে বাধাগ্রস্ত হয় কিনা, তাও দেখার বিষয়।

বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধনের সংখ্যা কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধনের ধারা কমে আসছে। রেমিট্যান্সেও পতন ঘটছে। একদিকে আমদানি ও রফতানি বাড়বে তেমনি মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।

ড. ভট্টাচার্য্য বলেন, একদিকে ঘাটতি কমবে, অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ বাড়বে। যে আর্থিক কাঠামোর ওপর পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মোট সরকারি ব্যয় বেশি রয়েছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, ঘাটতি বাজেটে ভঙ্গুরতা রয়েছে। গুণগত মানের পতন ঘটছে।

তিনি বলেন, মোট রাষ্ট্রীয় ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়নের মূল বিষয় প্রাক্কলনের সঙ্গে বাস্তবায়নের সঙ্গতি নেই। এই পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে, অর্থায়নের বিষয়টি। বৈদেশিক অর্থায়নে কথা রাখা যায়নি। ব্যয়ের ক্ষেত্রেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কথা রাখা যায়নি। মোট রাজস্ব আয়েও উত্থানপতনের ভেতর দিয়ে গেছে। প্রাক্কলনের সঙ্গে বাস্তবায়নের অমিল থাকলে প্রাক্কলন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

রাজস্ব আয়ের খাত প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আয়কর থেকেই বেশি আয় হবে। এটিই হওয়া উচিত। গত বছর টেলিফোন লাইসেন্স ফি’র মতো বড় ধরনের আয়ের খাত এবার নেই। রাজস্ব ব্যয়ের ৪২ শতাংশই সরকারের কাছে চলে যাবে। ১০ হাজার কোটি টাকাই যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

পরিবহন খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিবহন খাতে যাচ্ছে বাজেটের বিশাল অর্থ। সুদের ব্যয় মেটাতে চলে যাচ্ছে অনেক টাকা। ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা হয়েছে। এটি দুই শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এটি করা হয়েছে, আইএমএফের শর্তের কারণে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মধ্যে নৈরাজ্য চলছে। এত পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র ব্যয় করছে। অথচ নৈরাজ্যের কারণে মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন না।

প্রকল্প বাস্তবায়নের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ চলমান প্রকল্প রয়েছে। যেসব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা, তা শেষ হচ্ছে না। সেজন্য অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। এডিপিতে পুরনো প্রকল্পের প্রাধান্য থেকে যাচ্ছে।

কোন প্রকল্প আগে শেষ হতে হবে, তা ঠিক করা হচ্ছে না। এতে জনগণের উপকার হলো কিনা তাও দেখা হচ্ছে না। অর্থ খরচের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বৈদেশিক অনুদান বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ শতাংশ ঘাটতি বলা হলেও অনুদান বাদ দিলে এটি হবে ৪.৫ শতাংশ। বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি ডলার। এটি পেতে হবে ঘাটতি পূরণের জন্য।

তিনি বলেন, দেশ কোনো দিন ৩০০ কোটি ডলারের বেশি পায়নি। ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর, রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করার পর বাকি অর্থ মেটানো হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ থেকে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, এই বাজেটের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে বর্জন করা হয়েছে। ৭ম, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কোনো ইঙ্গিতও ছিল না বাজেটে। নির্বাচিত সরকারের প্রথম বাজেট হিসেবে বড় ধরনের উদ্দীপনামূলক কিছু ছিল না।

তিনি বলেন, বাজেট যেকোনো সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার। চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বিরাজমান অর্থনেতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাজেট। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মুদ্রার বিনিময় হার ভালো, পণ্যের দাম কমার মতো যেমন ইতিবাচক কিছু রয়েছে তেমনি বিনিয়োগের পতনের ধারা, রাজস্ব আদায়ের বড় ধরনের ঘাটতি, ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতাও রয়েছে।

এই অবস্থায় আর্থিক সঙ্গতি ফিরিয়ে নিয়ে আসা, অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরণ পুনর্জীবিত করা, ব্যক্তি বিনিয়োগ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তাবনা থাকা উচিত ছিল।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, বাজেটে ৬.৬ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে যাচ্ছে। গত বছর তা ৭ শতাংশ ছিল। একটি বছর গত ৫ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে এই ব্যয় বাড়ছে।

এদিকে, আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য কৃষি খাতের কৃষি মূল্য কমিশন গঠন, স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিটি গঠন, স্থানীয় সরকার অর্থায়ন কমিশন গঠন ও সরকারি ব্যয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বাজেট বাস্তবায় করা সম্ভব না। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১২-১৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগ থেকে অর্থনীতি স্লথ হওয়া শুরু হয়েছে। এর কারণ হলো বর্তমান সরকারের আমলে আমরা যে ধরনের উদ্যম আশা করেছিলাম তা পূরণ হয়নি। দেশ থেকে টাকা বাইরে (বিদেশ) চলে যাচ্ছে। টাকা পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে তা এতোটা যৌক্তিক না যে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর্জন করা সম্ভব হবে। প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্র অর্জন করতে হলে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতে, শিশুদের ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দের পতন ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর কারণ হলো পদ্মাসেতুর জন্য বাজেটে বড় অঙ্কের ব্যয় ধরা হয়েছে। ফলে সামাজিক খাতের ব্যয় কমেছে। পদ্মাসেতুর ব্যয় ধরা না হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু খাতের বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হতো।

কৃষি খাতের বরাদ্দা কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি উদ্বেগজনক। এ দিকে নজর দিতে হবে। কৃষি পণ্য দাম নির্ধারণের জন্য একটি কমিশন গঠন করা উচিত। বাজেটে পাট খাত উপেক্ষিত হয়েছে। পাট খাতের জন্য গার্মেন্টস খাতের মতো সুবিধা দেওযা উচিত।

দেবপ্রিয় বলেন, জেলেদের জন্য যে আইডি কার্ডের কথা বলা হয়েছে তা ঠিক আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে তাও ঠিক আছে। ক্যাপিটালের ক্ষেত্রে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে তার সুফল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পাবেন। গ্রিন ট্যাক্স ধার্য করার দিকটিও ভালো।

প্রতিরক্ষা খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা খাত মোট বাজেটের ৬.৬ শতাংশ পাচ্ছে। সাধারণত সংশোধিত বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়ে। সে হিসেবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ আরও ব‍াড়বে বলে আমরা আশা করছি।

জেলায় বরাদ্দ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা দিয়ে জেলা চালানো সম্ভব না। এ জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে আয় বাড়তে হবে।

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, আনিসাতুল ফাতেমা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:০৫ | শুক্রবার, ০৬ জুন ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com