| বৃহস্পতিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট
আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে আগামী তিনবছরের মধ্যে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করতে পারবেন বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কে এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করছি যে, যদি নির্বাচিত হই, তবে আমরা যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছি তাতে ২০২১ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে পৌঁছাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি নতুন নেটওয়ার্ক স্থাপনে পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। বর্তমানে এমন ১১টি অঞ্চলে কার্যক্রম চলছে, আরও ৭৯টি এখনও নির্মাণাধীন আছে। এগুলোতে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলোকে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় আরেকবার সরকার গঠনের সুযোগ পেলে বাংলাদেশ এশিয়ার দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত করতে পারবো বলে আত্মবিশ্বাসী আমি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভোটের আগে ৭১ বছর বয়সী এই নেত্রীর আগামী দিনের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি জাপানের গণমাধ্যমটি শেখ হাসিনার মুখোমুখি হয়। নিক্কে এশিয়ান রিভিউয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর)।
মিয়ানমার থেকে ৮ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার বিষয়কে নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে প্রচারণায় আনতে চান কিনা জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ মানবিকভাবেই আশ্রয় দিয়েছে। এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। কারণ, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিরাও পাকিস্তানের এমন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। তখন প্রায় এককোটি বাংলাদেশিকে আশ্রয় দেয় ভারত।নিজেদের অতীতের পরিস্থিতির কথা মনে করেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান যে জনগণ আমাকে বিশ্বাস করেছে। যখন রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেছি, প্রয়োজনে আমাদের খাবার ভাগ করতে বলেছি, তখন জনগণ তা মেনে নিয়েছে। আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যা করার ছিল করেছি। তাদের আশ্রয় দিয়েছি, খাবার দিয়েছি, চিকিৎসা দিয়েছি। নারী ও শিশুদের যত্ন নিয়েছি।
এশিয়ান রিভিউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে রোহিঙ্গারা যেতে আগ্রহ প্রকাশ না করায় তা পিছিয়ে যায়। নিকটবর্তী দ্বীপ ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা। তবে দ্বীপটি বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এটি কারাগারের মতো হবে, এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা চমৎকার একটা দ্বীপ। এখানে সবাই গরুর খামার করতো। রোহিঙ্গারা এখানে ভালো থাকবে। শিশুরা শিক্ষার আলো পাবে, চিকিৎসা পাবে। ত্রাণ সরবরাহের সুবিধার জন্য অবকাঠামোও নির্মাণ করবো আমরা। আপাতত একলাখ মানুষের আবাস তৈরি করা হলেও সেখানে ১০ লাখের বসবাসের ব্যবস্থা সম্ভব।
নিক্কে এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আবারও আশ্বস্ত করেন যে, কোনও শরণার্থীকে জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো হবে না। তবে এই সংকট সমাধানে অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিভাবে মিয়ানমারকে তাদের জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হবে, তা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব
প্রতিবেদনটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে বলা হয়, শেখ হাসিনা গত প্রায় এক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থ বছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮.২৫ শতাংশ। ক্রমাগত এ হার আরও বাড়তে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি
নিক্কে এশিয়ান রিভিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা গত প্রায় এক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থ বছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮.২৫ শতাংশ। ক্রমাগত এ হার আরও বাড়তে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী বছর যত দ্রুত সম্ভব দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়াকে বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ পারমাণবিক কেন্দ্রটি স্থাপন করা হবে।’
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্ধৃত করে নিক্কে এশিয়ান রিভিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ১৭,৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৫৮ শতাংশই প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। তবে দেশের গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অবকাঠামো কর্মসূচি হাতে নেন শেখ হাসিনা। তার শাসনকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে ১২১টিতে দাঁড়িয়েছে। ১৬ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৯৩ শতাংশের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। আগে তা ৪৭ শতাংশ ছিল। আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাশিয়া ও ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশের রূপপুরে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নিক্কে এশিয়ান রিভিউকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি চুল্লির উৎপাদন ক্ষমতা হবে সর্বমোট ২৪০০ মেগাওয়াট। ‘২০২৪ সাল নাগাদ সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে’। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনও জমি খুঁজছি।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্বাচনের পর জমি নির্ধারণ হলে এ ব্যাপারে প্রস্তাব আহ্বান করা হবে।
নিক্কে এশিয়ান রিভিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রেও বিনিয়োগে চীন আগ্রহী বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে চীনের। এর মধ্যে ২৪ বিলিয়ন শুধু অবকাঠামো নির্মাণে দ্বিপাক্ষিক সহায়তা ও ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার যৌথ প্রকল্পের জন্য। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখন ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনের, যা ভারতের চেয়েও বেশি। এছাড়া, চীনের সামরিক সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
এতে আরও বলা হয়, আসন্ন নির্বাচন শেখ হাসিনার নীতিমালার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছিল। সেবার নির্বাচন বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তবে এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জনমত জরিপগুলোর ফলাফলে দেখা গেছে, ৩০০টি আসনের মধ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করবে আওয়ামী লীগ। পূর্ব-পশ্চিম
Posted ২১:৫৩ | বৃহস্পতিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain