বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে

  |   রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

muslim-wedding

মানব জীবনে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে মানুষকে দায়িত্ববান বানায়। জীবনে আনে স্বস্তি ও প্রশান্তি। বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষ সক্ষম হয় যাবতীয় পাপাচার ও চারিত্রিক স্খলন থেকে দূরে থাকতে। অব্যাহত থাকে বিয়ের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ধারা। বৈধ ও অনুমোদিত পন্থায় মানুষ তার জৈবিক চাহিদা মেটায় কেবল এ বিয়ের মাধ্যমে। এককথায় বিয়েতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও অননুমেয় উপকারিতা।

বিয়ের বিবিধ কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।’ (সূরা রুম : ২১)।

বিবাহ একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ। প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের সুন্নত। আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই তোমার আগে আমি রাসূলদের পাঠিয়েছি এবং তাদের দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।’ (সূরা রা’দ : ৩৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে বিবাহ করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত)। অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বোখারি : ৫০৫৬)।

এজন্যই আলিমরা বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য দিয়ে অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়। কারও কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। যেমন- যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। তখন নিজেকে পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোজা রাখা। কেননা তা জৈবিক উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।’ (বোখারি : ৫০৬৬)।

শরিয়তে বিবাহ বলতে বোঝায়, নারী-পুরুষ একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এ সংজ্ঞা থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত। বিয়ে যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তাই বিয়ে করার আগে উচিত বিয়ের করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা। যেমন- দোয়া পড়া : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী, ভৃত্য বা বাহন থেকে উপকৃত হয় (বিয়ে বা খরিদ করে) তবে সে যেন তার মাথার অগ্রভাগ ধরে, বিসমিল্লাহ পড়ে এবং বলেন (‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর স্বভাবের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’) (বাইহাকি : ১৪২১১)।

দুই রাকাত সালাত আদায় করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে। আর স্ত্রীও দাঁড়িয়ে যাবে তার পেছনে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাকাত সালাত আদায় করবে এবং বলবে, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন আর আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ, আপনি তাদের থেকে আমাকে রিজিক দিন আর আমার থেকে তাদেরও রিজিক দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্র রাখুন আর আমাদের মাঝে যখন বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন তখন কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটাবেন।’ (ইবন মাজা : ১৯১৮)।

স্ত্রী সান্নিধ্যের গোপন তথ্য প্রকাশ না করা : বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি কর্তব্য হলো স্ত্রী সংসর্গের গোপন তথ্য কারও কাছে প্রকাশ না করা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে যে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় এবং স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ হয়, অতঃপর সে এর গোপন বিষয় প্রচার করে।’ (মুসলিম : ৩৬১৫)।

অলিমা করা : বিয়ের আরেকটি সুন্নত হলো অলিমা করা তথা মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমনকি তিনি আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিআল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন, ‘অলিমা কর, হোক না তা একটি ছাগল দিয়ে হয়।’ (বোখারি : ২০৪৯)।

বিয়ের দাওয়াত গ্রহণ করা : কেউ যদি বিয়ের দাওয়াত দেয় তাহলে সে দাওয়াত কবুল করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে যখন বৌভাতের দাওয়াত দেয়া হয়, সে যেন তাতে অংশ নেয়।’ (বোখারি : ৫১৭৩)।

নব দম্পতির জন্য দোয়া করা : নব দম্পতির জন্য নিচের দোয়া করা সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন কোনো ব্যক্তি বিবাহ করত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বরকত দিন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণে মিলিত করুন।’ (আবু দাউদ : ২১৩০)

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০২:৫৪ | রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

তোমার পথও চেয়ে !!
(3651 বার পঠিত)
নবীজির উম্মত
(2051 বার পঠিত)
তর্জনী
(791 বার পঠিত)
google5e999233a8e2dbce
(625 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com