| বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হলে প্রতিফোঁটা রক্তের জবাব সরকারকে দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে বাংলাদেম জামায়াতে ইসলামী।বিচারের রায় কার্যকরের নামে সরকার আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিযে বলেছেন, “আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হলে তার প্রতিফোঁটা রক্তের জবাব আওয়ামী লীগ ও তার সরকারকে দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে অনাগত ভবিষ্যতে বিচার নামক প্রহসনের জন্য আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এই সরকারকে তার বে-আইনি, অসাংবিধানিক ও নিজের ছকে বিচার পরিচালনা করে মৃত্যুদণ্ড হাসিল করার নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের কারণে অবশ্যই জনতার আদালতে দাঁড়াতে হবে।”
বিবৃতিতে বলা হয়- “সরকার সংবিধান, সুপ্রিম কোর্ট রুলস্ এবং জেলকোডের বিধান অবজ্ঞা করে জনাব আবদুল কাদের মোল্লাকে সুপরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যে ১০ তারিখ রাত ১২.০১ মিনিট সময় নির্ধারণ করে। জনাব আবদুল কাদের মোল্লার আইনজীবীরা সরকারের বে-আইনি আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজের নিকট আবেদন করলে ওই আদেশ স্থগিত করা হয়।”
এতে বলা হয়- “মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মৃত্যুদণ্ডের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে রিভিউ পিটিশনের ওপর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে শুনানি স্বাভাবিক দাবি ছিল। সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ পিটিশনের অধিকার জনাব আবদুল কাদের মোল্লাকে দেয়া হয়েছে। এ পিটিশন দায়েরের জন্য আইন অনুযায়ী ৩০ দিন সময় পাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই সরকার রায় কার্যকরের ঘোষণা দেয়, যা প্রকারান্তরে পরিকল্পিত হত্যারই নামান্তর। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের শুনানিতে স্বাভাবিকভাবেই সরকার কর্তৃক আদালত প্রভাবিত হয়েছে বলে জনগণের ধারণা।”
মকবুল আহমাদ বিবৃতিতে বলেন, “অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে শুনানির পর মহামান্য আদালত সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দেন। ওই খারিজ আদেশে কি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা এখনো জনগণের সামনে পরিস্কার নয়। তদুপরি আবেদনে জেলকোড অনুসরণ সংক্রান্ত বিষয়ে আইনজীবীগণ উল্লেখ করেছিলেন। সংক্ষিপ্ত মৌখিক আদেশে জেলকোড সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কিছু জানা যায়নি। এ অবস্থায় জনাব আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রদত্ত আদেশ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানার অধিকার তার রয়েছে। অথচ সরকার রায় কার্যকরে কোনো বাধা নেই বলে প্রচার করে তড়িঘড়ি করে আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, জনাব আবদুল কাদের মোল্লাকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যার যে আয়োজন করেছিল সরকার তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। যে আইনে তার বিচার করা হলো তা এবং ট্রাইব্যুনাল, দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত। এই বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে আছে স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সেইফ হোম কেলেঙ্কারি। বিচার করছে আদালত আর রায়ের দিন, তারিখ, সময় নির্ধারণ করে বক্তব্য রাখছেন সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা। এই বিচারে জালিয়াতির নিকৃষ্ট উদাহরণ ভুয়া মোমেনা বেগমের স্বাক্ষ্য। যে মোমেনা বেগমের স্বাক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, ওই কথিত মোমেনা বেগম তার স্বাক্ষ্যের তিন জায়গায় তিন রকম বক্তব্য দিয়েছে, যা বিবেচনা করে বিচারপতি আবদুল ওহাব মিঞা ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের সাঙ্গে একমত পোষণ করেননি।”
বিবৃতিতে মকবুল আহমাদ বলেন, “শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিচার পরিচালিত হয়েছে সরকার নির্দেশিত ছকে। বিশ্ব সম্প্রদায় বিচার প্রক্রিয়া ও রায় সম্পর্কে যেসব বক্তব্য রেখেছেন এ সরকার তা অগ্রাহ্য করে জনাব আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করতে অস্থির হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার নাভি পিল্লাই, দুইজন বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস্ কমিশন, ব্রিটিশ সিনিয়র পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, লর্ড অ্যাভেবুরি, লর্ড কার্লাইলসহ আন্তর্জাতিক মহল জনাব আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিবাদে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে জনাব আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করতে চাচ্ছে। সরকার তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এটি একটি নিকৃষ্ট রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”
মকবুল আহমাদ বলেন, “আমি মানব ইতিহাসে এ কলঙ্কজনক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশের আপামর জনতা ও বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার এবং সরকারের এই নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
Posted ১৬:৩৪ | বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin