শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবুল হোসেনের জন্য ভাবা হচ্ছে দুই পদ

  |   মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট

আবুল হোসেনের জন্য ভাবা হচ্ছে দুই পদ

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ উঠার পর মন্ত্রিত্ব, দলে অবস্থান-সবই হারিয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। কানাডা আদালত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে গালগপ্প এবং গুজব বলে উড়িয়ে দেয়ার পর উদ্ভব হয়েছে নতুন পরিস্থিতির। আবুল হোসেন গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তার সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন উঠেছে সরকার আর সরকারি দল আওয়ামী লীগে পদ ফিরে পাওয়ার বিষয়টি।

এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে এক মাস। আবুল হোসেনের বিষয়টি এখনও ঝুলে রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিশ্চিত করেছেন, তাকে দল অথবা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। তবে সেটা কবে এটা জানেন কেবল শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আবুল হোসেনকে দলে তার আগের পদ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক দেয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি তার পদোন্নতি দিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করাও নিয়েও আলোচনা চলছে।

সরকারে যোগাযোগমন্ত্রীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগে আন্তর্জাতিক সম্পাদক ছিলেন আবুল হোসেন। তাকে সরিয়ে দেয়ার পর দলের আরেক নেতা ফারুক খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ২০ তম সম্মেলনের পরে ফারুক খান পদোন্নতি পেয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। আর এতে ফাঁকা থাকে আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটি।

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিনটি এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটি ফাঁকা রয়েছে। সেই হিসাবে সৈয়দ আবুল হোসেনর পদোন্নতিরও সম্ভাবনাও রয়েছে। আর পদোন্নতি মানে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান  বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যে তাকে অপবাদ দিয়েছে সে জন্য তার উচিত বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা। আর আমি আশা করি দলও তাকে মূল্যায়ন করবে।’

আবুল হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন নেতা  বলেন, ‘দুর্নীতির অসত্য অভিযোগ তুলে সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো একজন মার্জিত ব্যক্তিকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দলের পদ কেড়ে নেয়া হয়েছে। দলের মনোনয়নও দেয়া হয়নি সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে। সব হারিয়ে তিনি এখনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই আছেন। যারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তারা তো প্রমাণ করতে পারেনি। তাহলে তার সুনাম নষ্টের কী হবে? এখন তো আবুল হোসেনকে মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তিনি যোগ্য।’

মন্ত্রিসভায় ফেরার সম্ভাবনা কতদূর?

পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ উঠার পর চাপের মুখেও আবুল হোসেনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বাইরে এক অনুষ্ঠানে আবুল হোসেনকে তিনি দেশপ্রেমিক আখ্যাও দিয়েছিলেন। সে সময়ের বাস্তবতায় আবুল হোসেনের পক্ষে এই বক্তব্য দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছিলেন বিএনপি নেতারা। বেশ কিছু গণমাধ্যমে এ নিয়ে তীর্যক ও টিপ্পনী কেটে লেখনীরও প্রচার হয়েছিল।

তবে প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়ালেও পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন যেন অব্যাহত থাকে এবং এই অভিযোগের তদন্তে যেন স্বচ্ছতা থাকে, সে জন্য ২০১২ সালের ২৩ জুলাই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন আবুল হোসেন।

কানাডা আদালতের রায়ের পর সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে আবুল হোসেনের সুনাম ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তখন থেকেই কথা হচ্ছে, আবুল হোসেন সরকারে ফিরছেন কি না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে সরকারি দলের নেতাদের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা নেই। কেউ বলছেন, আবুল হোসেন যেহেতু তার সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন, তাই তাকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেয়া হতে পারে।

তবে কোনো কোনো নেতা এমনও বলেছেন, গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও আগামী নির্বাচনে আবুল হোসেন আবার মনোনয়ন পেতে পারেন। আর ওই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারলে আবুল হোসেনকে মন্ত্রী করা হতে পারে।

তবে এই বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার জানিয়ে একাধিক নেতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেননি।

পদ্মাসেতুতে কথিত দুর্নীতি এবং আবুল হোসেনের হেনস্থা

২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের দিকে আঙ্গুল তোলে। তার বিরুদ্ধে তদন্তের পাশাপাশি মামলা করতে চাপ দিতে থাকে সংস্থাটি। সরকার সে দাবি না মানায় ২০১৩ সালের জুনে ১২০ কোটি ডলার অর্থায়নের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। তারা সরে যাওয়ার পর অন্য সহযোগী সংস্থা জাইকা, এডিবি ও আইডিবিও সরে যায় এবং সরকার নিজ অর্থে সেতুর কাজ শুরু করে।

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন জড়িত ছিল এই দুর্নীতি চেষ্টার সঙ্গে। তাদের এই সেতু প্রকল্পে পরামর্শকের কাজ পাওয়ার কথা ছিল। আর এই কাজ পেতে ওই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এদের মধ্যে আবুল হোসেনেও আছেন।

কিন্তু সরকার এই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করতে থাকে। পরে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই দুদক আলাদা তদন্ত দল গঠন করে অভিযোগের অনুসন্ধান চালিয়ে যায়। কিন্তু তারাও কোনো সত্যতা পায়নি। এরপরও বিশ্বব্যাংক আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার জন্য চাপ দিতে থাকে। দুদকের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটির কর্মকর্তারা এমনও বলেন, আবুল হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে চাপ দিলেই প্রমাণ বের হয়ে আসবে।

একই সময় কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ দুই জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের রাজনীতিতে আসা

১৯৯২ সালে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলে আসেন ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। পরে ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন হন। মহাজোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পান তিনি।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে আবারও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান আবুল হোসেন। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য থাকলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি আবুল হোসেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় অনেকটাই আলোচনার বাইরে ছিলেন সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রী।

দশম সংসদ নির্বাচনে আবুল হোসেনের মাদারীপুর-৩ আসনে তার বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

আবুল হোসেন এলাকায় একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। তিনি মাদারীপুরে বেশ কিছু স্কুল, কলেজ করেছেন। যেগুলো তার নিজস্ব অর্থায়নের পরিচালিত হচ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:৪৩ | মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com