| বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ | প্রিন্ট
অনলাইন ডেস্ক : সাত দফা দাবিতে আন্দোলনেই যাচ্ছে বিএনপি। সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে নিলেও তা ফলপ্রসূ হবে না বলে ধারণা দলটির নেতাদের। সংলাপকে ‘সময়ক্ষেপণের কৌশল’ ভাবছেন তারা।
খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি, সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, নানা অজুহাতে নীরব গ্রেফতারসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার বিএনপিকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
এ কারণে আন্দোলনকেই তারা দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে নিতে চান। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কর্মসূচি কী হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
হরতালের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। তিন স্তরের নেতাকর্মীকে আন্দোলন সফলে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ রয়েছে।
এ সংলাপে আওয়ামী লীগ কতটুকু আন্তরিক, সংলাপ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা জনগণ বুঝতে পারছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে সংলাপের সফলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এটা ঠিক ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ না করে বিএনপি যে ভুল করেছিল, তা এবার করতে চায় না।
সংলাপ সফল হোক বা না হোক এর দায় যেন বিএনপির ওপর না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখা হবে। জনগণের কাছে তারা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে সতর্ক থাকবে।
একই সঙ্গে তারা সতর্ক থাকবে যাতে সরকারের ফাঁদে পড়ে না যায়। এ জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করছে হাইকমান্ড।
মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল চেয়ে করা আপিলও খারিজ করে দেন আদালত।
রায়ের পর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে করণীয় নির্ধারণে দফায় দফায় বৈঠক করেন দলের সিনিয়র নেতারা। এসব বৈঠকে অধিকাংশ নেতা বলেন, সাজা বাড়ানো হবে এমনটা তারা ধারণাও করেননি।
এর মাধ্যমে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের উদ্দেশ্য নিয়েও নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে নেতারা একমত হন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা জানান, আন্দোলনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংলাপে ব্যর্থ হলে আন্দোলনের ব্যাপারে সায় রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের। তবে তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার কথা বলেছেন।
তিনিও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, একদিকে সংলাপের কথা বলছে আর অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করেছে।
এভাবে সংলাপ হয় কিনা আমি জানি না। সাত দফার মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা যাই বলি না কেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে নিয়ে নির্বাচনে যেতে চাই।
খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে ফাঁদে পা দেয়া। তিনি বলেন, আন্দোলনের বিকল্প নেই। আন্দোলনের বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের বার্তাও দেয়া হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায়ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নয়াপল্টনে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকেই তফসিল ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন নেতারা।
এ সময় অনেকে কী ধরনের কর্মসূচি হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।
তবে এবার অন্যান্য জেলার চেয়ে ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত এক মাস ধরে আন্দোলনের বিষয়ে মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহূর্তে সংলাপের আয়োজনকে আমরা সরকারের কৌশল হিসেবে দেখছি। তারা সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে যেন আমরা আন্দোলনে যেতে না পারি। সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি বলে সোমবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকে সিনিয়র নেতারা একমত হয়েছেন। ওই বৈঠকে সবাইকে সতর্ক থাকার ব্যাপারেও বিএনপির মহাসচিব আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আন্দোলনকে টার্গেট করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলটির ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের এ বিষয়ে বার্তা দেয়া হয়েছে।
তিন স্তরের নেতাকর্মীকে আন্দোলন সফলে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের আন্দোলনে নামার আগ পর্যন্ত গ্রেফতার এড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। একই সঙ্গে রাজধানীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকে ১০ জন করে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে হাইকমান্ডকে।
রাজধানী ঢাকাকে টার্গেট করে আন্দোলন সফলে এসব নেতাকে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
আর আন্দোলন সমন্বয় করার জন্য বিএনপির মহাসচিবের পাশাপাশি একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যকেও দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র : যুগান্তর
Posted ১৩:২০ | বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain