| শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ একাত্তরের এ দিনে মুক্তিকামী মানুষের প্রত্যাশাকে ধারণ করে রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলার লাখো জনতার সামনে দাঁড়িয়ে স্বাধিকার আন্দোলনের নেতা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ পাশাপাশি তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আহূত ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য চারটি দাবি উত্থাপন করেন। রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নয়। তবু স্বাধীনতা যুদ্ধে তো বটেই, আজও শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষকে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করে।
একাত্তরের ৭ মার্চ মধ্যাহ্নের পর রেসকোর্স ময়দানে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ। লাঠি হাতে প্রতিবাদী মানুষ, শহরের মানুষ, গ্রামের মানুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব, বৃদ্ধ-যুবা-সর্বস্তরের মানুষ। এর আগের ঘটনাপ্রবাহে সেদিনের জনসভাটি পরিণত হয় মুক্তিকামী মানুষের মিলন মোহনায়।
এদিনে শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ২০ মিনিটের ভাষণে পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশসহ সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণের দাবি উত্থাপন করেন। সেদিন প্রতিটি মানুষ ও মিছিলের গন্তব্য ছিল একটাই, রেসকোর্স ময়দান। পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণের জন্যই যেন অধীর অপেক্ষায় ছিল পুরো জাতি। বসন্তের বৃক্ষশোভিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গায় এখন গাছে গাছে সবুজ কুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে, একাত্তরের এদিনে সেখানেই অঙ্কুরিত হয়েছিল আজকের বাংলাদেশ।
এ ঐতিহাসিক ভাষণ ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ সম্প্রচার না করায় বাঙালি কর্মচারীরা এ দিন কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে টেলিভিশনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ সম্প্রচার করা হলেও এ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতার কেন্দ্রের কর্মচারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। ফলে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সম্প্রচারও বন্ধ হয়ে যায়। গভীর রাতে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের কর্মচারীদের সঙ্গে সামরিক কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ আলোচানার পর দিন ৮ মার্চ (সোমবার) সকাল ৬টা থেকে রেডিও সম্প্রচার শুরু এবং সাড়ে ৮টায় রেসকোর্সের বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণী ঢাকাসহ দেশের সব কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে ‘স্বাধীন বাংলার’ দাবিতে এ দিন (৭ মার্চ রোববার) ব্রিটেন প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনের পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা শত শত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডসহ ‘ভুট্টোর বিচার চাই’ বলে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভ চলাকালে পাকিস্তানি হাই কমিশনার অফিসের বাইরে এলে তার প্রতি ঢিল ছোড়া হয় এবং এতে তিনি আহত হন। ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচি দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেবেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের সব শাখা কমিটি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
Posted ০৮:২৯ | শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin