মঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আওয়ামী লীগ সমাজকে দূষিত করে তুলেছে : সিলেট নগর বিএনপি‘র সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

আওয়ামী লীগ সমাজকে দূষিত করে তুলেছে : সিলেট নগর বিএনপি‘র সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

অনেক জল্পনা। অনেক হিসাব। সিনিয়রদের দৌড়ঝাঁপ। কর্মীদের নানা  প্রেডিকশন। সবকিছু উতরে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে পেলো সিলেট মহানগর বিএনপি। গতকাল বিকালে সিলেটের রেজিস্ট্রারী মাঠে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কমিটির প্রধান তিনটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।  শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের পর সন্ধ্যায় গণনাকালে ফলাফল জানতে উপস্থিত ছিলেন হাজারো নেতাকর্মী। শুধু মহানগরের নয়, জেলা বিএনপি সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও ছিলেন উপস্থিত। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল। তবে- ভোটের হিসাবে সভাপতি পদে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রেজাউল করিম চৌধুরী নাচন।

লড়াইয়ে রয়েছেন সভাপতি পদে মিফতাহ্‌ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক পদে ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব।

অন্যরকম ভোট: সিলেট মহানগর বিএনপি’র কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এবার সিলেটে নির্বাচনের মতো কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণা চলেছে। প্রার্থীরা গোটা নগরজুড়ে করেছেন পোস্টারিং। সাঁটিয়েছেন ব্যানার, বিলবোর্ডও। শুধু প্রার্থীরাই নয়, তাদের কর্মী- সমর্থকরাও প্রচারণা চালান। এতে করে গোটা নগরে ভোটের আমেজ বিরাজ করে। একই সঙ্গে নগর বিএনপি’র সব অংশের নেতারাও তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা শেষে গতকাল  বেলা দু’টার পর থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ পর্ব। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন সার্বক্ষণিক  ভোটগ্রহণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন মৌলভীবাজার বিএনপি’র সভাপতি এম. নাসের রহমান ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন। তবে- ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রেজিস্ট্রারী মাঠের ভোটকেন্দ্রে তারা সব সময় নেতাকর্মী বেষ্টিত অবস্থায় থেকেছেনও।

১৯১৭ জন ভোটার। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজের তত্ত্বাবধানে সুন্দরভাবে সাজানো হয় সবকিছু। প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটারের জন্য ছিল আলাদা আলাদা বুথ। এছাড়া- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সহ সিনিয়র নেতারা ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে শঙ্কা উড়িয়ে সুশৃঙ্খল ভোট উপহার দিলো সিলেট মহানগর বিএনপি। সিলেট বিএনপিতে ভোটগ্রহণের ট্র্যাডিশন এবার নতুন নয়। ২০১৬ সাল থেকে লাগাতার ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করা হচ্ছে। এবার যুবদলেও ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করা হয়। এতে করে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এদিকে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন; সময়ে না হওয়ার কারণে বিকাল ৫ টার পরিবর্তে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। কিছু কিছু ভোটার আসতে দেরি হওয়ার কারণে এই সময় বর্ধিত করা হয়। এতে মত ছিল প্রার্থীদেরও।

আওয়ামী লীগ সমাজকে দূষিত করে তুলেছে: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ সমাজকে বিভক্ত করার পাশাপাশি দূষিত করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, দেশের সংবিধানকে আগেই ধ্বংস করা হয়েছে। এরপর দেশের অর্থনীতি, বিচার, নির্বাচন ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গতকাল দুপুরে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে মহানগর বিএনপি’র সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্যকালে তিনি একথা বলেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে সকালে পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তারা কি পেরেছে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে? পারেনি। আজকে আরও দুর্বার গতিতে মানুষ জেগে উঠেছে। এবং জেগে উঠেছে একটিমাত্র লক্ষ্যে, যেভাবেই হোক এই দানবীয় সরকার, যারা আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদের পরাজিত করতে হবে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে, পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিগুলো করেছে, তার মধ্যে আমি  কয়েকটার কথা আপনাদের বলবো। একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে- আমাদের যে সংবিধান ১৯৭২ সালে এই দেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারা বারবার কাটাছেঁড়া করে একটা অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে।

আমাদের যারা যুদ্ধ করেছিলেন, যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটা স্বাধীন দেশের, তারা আজকের এই সংবিধান দেখতে চাননি বন্ধুগণ। বাহাত্তরের সংবিধানে যে মৌলিক বিষয় ছিল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সেটাকে ১৯৭৫ সালে তারা ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল গঠন করেছিল। যখনই তারা সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতায় আসার তখনই তারা সংবিধানকে ধ্বংস করেছে, তখনই তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হাত দিয়েছে, সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেছে, কণ্ঠরোধ করেছে সংবাদপত্রের।’ ‘সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করেছে, যেটাকে টেনে তোলা অত্যন্ত কঠিন। আজকে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়নটা কার জন্য? এই উন্নয়ন গুটিকতক মানুষের জন্য। তারা পাতাল রেল করছে, মেট্রোরেল করেছে, কতো টাকা খরচ হয়েছে? যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে তিনগুণ খরচ করেছে। পদ্মা সেতু করে খুব বাহবা নেয় তারা। সেই পদ্মা সেতু বানাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট, তার প্রকল্প, যেটা আমাদের সময় করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। চট্টগ্রামে টানেল তৈরি করেছে, যে টানেলের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আমরা জানি না। অথচ হাসপাতালে আমার রোগীরা ঠিকমতো বেড পায় না, ওষুধ পায় না, তারা ডাক্তার পায় না। হাসপাতালে ঢোকার মতো কোনো পরিবেশ থাকে না।

আজকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশির ভাগ মানুষকে বাইরে চলে যেতে হচ্ছে, ভারতে যেতে হচ্ছে, দেশে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না।’ ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ‘বিচার ব্যবস্থাকে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে। এইভাবে তারা আজকে দেশ পরিচালনা করছে শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে। তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে তাদের টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। আদানি, ভারতের বিশাল কোম্পানি, তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লোকসান হবে। অন্য দেশের চেয়ে দ্বিগুণ দামে আমাদেরকে কয়লা কিনতে হচ্ছে। চুক্তির ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে প্রায় ১৬ টাকার মতো, যেটা এখন ৮ টাকার মতো দিতে হচ্ছে। এটাও আবার দুই মাসে তিনবার দাম বাড়িয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে তারা টাকা নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম এত বাড়তো না, যদি চুরি বন্ধ করা যেতো। আজকে তাদের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে অসহায় হয়ে পড়েছে। কথা দিয়েছিল, তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খেতে পারেন এখন? না, ৭০ টাকা কেজি মোটা চাল এখন। এখন পত্রিকায় দেখলাম, মিহি চাল যেটা সেটা ১৭০ টাকা। ডালের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে। ডিম সাধারণ মানুষের প্রোটিনের উৎস, সেটার দাম তিন-চারগুণ বেড়েছে।

ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে এক লাফে ৬০ টাকা। মানুষ কোথায় যাবে? তাদের কথার বাগাড়ম্বর যে এখন নাকি দেশ সবচেয়ে ভালো আছে। তারাই নাকি আসলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়। আরে উন্নয়ন ধুয়ে খাবে মানুষ, যদি ভাত খেতে না পারে? আর কোথায় উন্নয়ন? উন্নয়ন হলে তো কর্মসংস্থান থাকতো। বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, চাকরি পায়? সরকারি হিসেব মতে প্রায় ৩ কোটি বেকার।’ ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে সরকার’ এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গত দুটো নির্বাচন করেছে, আপনারা দেখেছেন, যার একটিতে কোনো ভোটই হয় নাই, ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করিয়ে তারা সরকার গঠন করেছিল। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কুকুর বসেছিল। ২০১৮ এর যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে আগের রাতেই তারা সব ভোট দিয়ে চলে গেছে। আর ভোটের দিন যেটুকু বাকি ছিল, সেটুকু করে, কাউকে কাছেও ভিড়তে দেয়নি। তার আগে পুলিশকে ব্যবহার করে তারা এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছিল, আমাদের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না।’ ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি ৩টি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রাণের কী কোনো মূল্য নেই? কাদের জন্য এরা মারা যাচ্ছে? তাদের বিচার করতে হবে।

সরকারের ব্যর্থতা, তাদের ডিপার্টমেন্টগুলোর ব্যর্থতা, যারা দায়িত্বে আছেন তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’ সিলেট নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকির সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান লোদী কয়েসের পরিচালনায় সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এম এ জাহিদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদী লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া সম্মেলনে জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:১৯ | শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(728 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com