শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

অনিয়মে ধুঁকছে নতুন ব্যাংক

  |   শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট

অনিয়মে ধুঁকছে নতুন ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট : শুরুটা ছিল গত বছরের শেষদিকে ফারমার্স ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি ও মাহবুবুল হক চিশতীর পদ হারানোর মধ্য দিয়ে। পরে ফারমার্স ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা পরিচালকদের সবাই পর্ষদ থেকে বাদ পড়েছেন। এর পর নতুন প্রজন্মের আরেক ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল থেকে ঝরে পড়েছেন প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যানসহ চার পরিচালক। সম্প্রতি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের দুই পরিচালককে বাদ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ জালিয়াতি, বেনামি শেয়ার ধারণসহ অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাদ পড়েছেন এসব উদ্যোক্তা।

রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের পরামর্শে নতুন ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসব ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে তিনটি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কার্যক্রমে গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। অনিয়মে এগিয়ে থেকে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির অনিয়মের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। এ খাতে সম্প্রতি তারল্য সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনাকে দায়ী মনে করেন অনেক শীর্ষ ব্যাংকার।

নতুন ওই ৯ ব্যাংকের মধ্যে বাকি ব্যাংকগুলোতেও কমবেশি অনিয়মের ঘটনা রয়েছে। বিশেষ করে অন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কেনা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়া ঋণ বিতরণ, খেলাপি গ্রাহকের তথ্য গোপন করে নতুন ঋণসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে পরিচালকদের সংশ্নিষ্টতা প্রমাণ না হওয়ায় ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নানা অনিয়মের কারণে ফারমার্স ছাড়াও মেঘনা ও এনআরবি ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে নিট লোকসানে পড়েছে। নতুন ব্যাংকগুলোর তালিকায় আরও রয়েছে মিডল্যান্ড, মধুমতি, এনআরবি গ্লোবাল ও ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যে মিডল্যান্ড ও মধুমতি ব্যাংকের বিশেষ কোনো অনিয়মের ঘটনা শোনা যায়নি।

ফারমার্স ব্যাংক :ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেওয়া, ঋণের বিপরীতে কমিশন, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদকে চেয়ারম্যান ও মারুফ আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। পরিবর্তন আনা হয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী, অডিট ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটিতে। এর পর ১৯ ডিসেম্বর একেএম শামীমকে এমডি পদ থেকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পরিচালনা

পর্ষদের নতুন কমিটিও বেশি দিন টিকতে পারেনি। ব্যাপক তারল্য সংকটের মুখে গত জানুয়ারিতে মূল উদ্যোক্তাদের সবাই বাদ পড়েছেন পরিচালনা পর্ষদ থেকে। জালিয়াতির ঘটনায় মাহবুবুল হক চিশতী এখন জেলে।

ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি হিসেবে নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন চৌধুরী নাফিজ শারাফাত। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন তিনি। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে গত মে মাসে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি ৭১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের এমডিরা প্রতিনিধি হিসেবে এখন ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে আছেন ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি। ফলে মূল প্রতিষ্ঠাকালে পরিচালনা পর্ষদে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে চৌধুরী নাফিজ শারাফাত ছাড়া কেউই নেই এ ব্যাংকের পর্ষদে।

ফারমার্স ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত বিভিন্ন পরিদর্শনে মালিক পক্ষের বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ও অস্বিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান, অন্য ব্যাংকের মন্দ ঋণ কেনা, ঋণের তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন গুরুতর জালিয়াতি ধরা পড়ে। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংকটি আমানতকারীর অর্থ ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না। গত জুন পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা। অথচ আমানত নেমে এসেছে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকায়। ব্যাংকটির এক হাজার ৫২১ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

এনআরবি কমার্শিয়াল :২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৬৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার বেনামি শেয়ার এবং ৭৫০ কোটি টাকার ঋণে গুরুতর অনিয়ম পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূত সুদ মওকুফ, বেনামে পরিচালকদের ঋণ, পরিচালকদের দ্বন্দ্বসহ নানা অসঙ্গতির তথ্য উঠে আসে। এসব ঘটনায় ব্যাংকটির মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী ফরাছত আলীসহ কয়েকজন পরিচালকের সম্পৃক্ততা পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৬ ডিসেম্বর এমডির পদ থেকে দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করা হয়। এর পর গত ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাছত আলীসহ চার পরিচালককে অনাপত্তি না দেওয়ায় তারা বাদ পড়েছেন। অন্যরা হলেন- নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী, পরিচালক এবিএম আবদুল মান্নান ও মো. আমির হোসেন।

জানা গেছে, এনআরবিসি ব্যাংকের পঞ্চম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয় গত ২১ জুলাই। সভা থেকে মোট ১৭ জন পরিচালককে নির্বাচিত করা হয়। এদের মধ্যে মুনসেফ আলী ছাড়া বাকি ১৬ জনের বিষয়ে অনাপত্তি চেয়ে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ জন পরিচালকের নিয়োগ অনুমোদন করে। বাকি ৬ জনের মধ্যে চারজনের আবেদন সরাসরি নাকচ করা হয়। আর মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ও একেএম মোস্তাফিজুর রহমানের ঋণ অনিয়মিত থাকায় আপাতত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নিয়মিত হলে বিবেচনা করার বিষয়ে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রকৌশলী ফরাছত আলী বলেন, তাদের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির কারণে এ রকম হয়েছে। তিনি আবার ফিরবেন বলে আশাবাদী।

সাউথ বাংলা ব্যাংক :নতুন প্রজন্মের সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে বাদ পড়েছেন দুই পরিচালক। এর মধ্যে রতনপুর গ্রুপের কর্ণধার মাকসুদুর রহমান ছিলেন ব্যাংকটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান। সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকার বেনামি ঋণ নিয়ে আর ফেরত না দেওয়ায় পরিচালক পদ হারিয়েছেন তিনি। অপর পরিচালক এগ্রোভিটা গ্রুপের কর্ণধার এম মোয়াজ্জেম হোসেন ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে খেলাপি হওয়ায় বাদ পড়েছেন। গত ১০ মে অনুষ্ঠিত এসবিএসসি ব্যাংকের পঞ্চম বার্ষিক সাধারণ সভা থেকে এ দু’জনসহ ৬ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। গত ২৬ জুলাই এদের বিষয়ে অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দেয় ব্যাংক। গত ২০ আগস্ট ৪ জনের বিষয়ে অনাপত্তি দেওয়া হয়। মাকসুদুর রহমানকে অনাপত্তি না দেওয়ার বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, প্রবাসীদের উদ্যোগে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নিয়ম লঙ্ঘন করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে বেনামি শেয়ার ধারণ করেছেন তিনি। আবার সেই শেয়ারের বিপরীতে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন। আর মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হওয়ায় তাকে অনাপত্তি দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে বাদ পড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আমির হোসেনের শেয়ারের প্রকৃত মালিক মাকসুদুর রহমান। এই আমির হোসেনকে আটলান্টিক রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেখিয়ে সাউথ বাংলা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে মাত্র ৭ লাখ টাকা গেছে আটলান্টিকের হিসাবে। বাকি ২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা রতনপুর গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা নগদে তুলে রেক্স মটরসের হিসাবে জমা করেন। রেক্স মটরস রতনপুর গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সূত্র : সমকাল

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:১৭ | শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com