নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের নানা দৈহিক পরিবর্তন দেখা দেয়। চুল পাকা, ত্বক কুঁচকে যাওয়া কিংবা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোকে মানুষ সহজভাবেই মেনে নেন। কারণ এগুলো যন্ত্রণাহীন। কিন্তু বয়সের সঙ্গে পরিবর্তন কেবল বাইরে নয়, ভেতরেও হয়। এমনই একটি সমস্যা ডিস্ক ডিজেনারেশন বা শিরদাঁড়ার বয়সজনিত পরিবর্তন। সহজ বাংলায় যাকে বয়সজনিত মেরুদন্ড ব্যথা বলা যায়।
বয়স বাড়লে এই সমস্যা দেখা দিবেই। একে কোনোভাবে থামানো যায় না। তবে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন আর শরীরচর্চার মাধ্যমে এই স্বাস্থ্যসমস্যাটিকে বিলম্বিত করা যায়।
মেরুদণ্ড ব্যথা হয় কেন?
মেরুদণ্ডে প্রতিটি জোড়া ভার্টিব্রা বা কশেরুকা একটি ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক দিয়ে আলাদা করা থাকে। এটি দেখতে অনেকটা ডিমের কুসুমের মতো, যার বাইরের খোলসটা সুতোর মতো দড়িদড়া দিয়ে তৈরি। এই অংশকে অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস বলা হয়। আর ডিমের কুসুমের মতো থলথলে অংশটিকে নিউক্লিয়াস পালপোসাস বলে। এটিই শক অ্যাবজর্বার বা ঝাঁকুনি রোধক হিসেবে কাজ করে।
নিউক্লিয়াস পালপোসাসে মূলত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ— প্রোটিয়োগ্লাইকান এবং কোলাজেন থাকে। প্রোটিয়োগ্লাইকানের কাজ হলো শরীর থেকে পানি শুষে নিউক্লিয়াস পালপোসাসের জেলির জলীয়ভাব বজায় রাখা। যেন ডিস্কের ঝাঁকুনি রোধ করার ক্ষমতা বজায় থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রোটিয়োগ্লাইকান এবং কোলাজেনের চরিত্র বদলাতে থাকে। ফলে ডিস্কের নিজস্ব চেহারা এবং বহনক্ষমতা কমে যায়। একেই ডিস্ক ডিজেনারেশন বলে। বহনক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কমে যায় নমনীয়তাও। ফলে জড়তা সৃষ্টি হয়। এরই সঙ্গে দু’পাশের ফ্যাসেট জয়েন্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এই দু’পাশের অসম বহনক্রিয়ার ফলে কশেরুকার মূল অংশে নতুন ছড়ানো–ছিটানো হাড় তৈরি হতে থাকে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এই পরিবর্তনকেই স্পনডাইলোসিস বলে, যা সবচেয়ে বেশি হয় ঘাড় ও কোমরের শিরদাঁড়ার তলার অংশে।
বয়স যত বাড়ে, অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাসও তত দুর্বল হতে থাকে। হঠাৎ করে কোনো নড়াচড়া বা আঘাতের ফলে ডিস্কের টুকরো অ্যানিউলাসের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে। এই সমস্যাকে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বলে। আবার কশেরুকার দু’পাশে যে স্নায়ু বার হয় সুষুম্নাকাণ্ড থেকে, এই ডিস্কের টুকরো অনেক সময় সেইখানে গিয়ে চাপ দেয়। তখন হাত বা পা বরাবর যন্ত্রণা হয়। এইরকমই একটি যন্ত্রণা সায়াটিকা নামে পরিচিত।
মেরুদণ্ড ব্যথার চিকিৎসা
বয়স্কদের ঘাড়, কোমর, শিরদাঁড়ায় প্রবল ব্যথা হলে নিজ ইচ্ছামতো ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নির্দিষ্ট এক্সরে, সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করে চিকিৎসক বুঝতে পারবেন কোথায় ও কেন সমস্যা হচ্ছে। ডিস্ক ডিজেনারেশন জটিল হলে বিশ্রামে থাকলেও ব্যথা হয়।
চিকিৎসকের মতে ডিস্ক ডিজেনারেশনের ফলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো হয়, তা সবসময় খুব বিপজ্জনক নয়। প্রথমে দেখা হয় ওষুধ, বিশ্রাম ও ফিজিয়োথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা সারানো যায় কিনা। কিছু ক্ষেত্রে ঘাড়ে ও কোমরের জন্য বেল্ট দেওয়া হয় যেন এই দুটি অঙ্গে সাপোর্ট থাকে। এতে সমাধান না হলে অস্ত্রোপচার বাধ্যতামূলক।
ডিস্ক ডিজেনারেশন এড়াতে করণীয়
সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না।
পানিভর্তি বালতি, ভারী জিনিস তোলা বা ঠেলা এড়িয়ে চলুন।
ঘর মোছার ক্ষেত্রে স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন।
দাঁড়িয়ে রান্না করলে মাঝে মাঝে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিন।
রাতের খাবার সাড়ে আটটার মধ্যে সেরে ফেলুন।
টেবিল-চেয়ারে বসে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
মাটিতে বসা এড়িয়ে চলুন।
নিজের সুবিধে অনুযায়ী খাট বা চেয়ারের উচ্চতা স্থির করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
অনেকেই ৫০-৫২ বছর বয়সে জিমে যাওয়া শুরু করেন। এক্ষেত্রে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এই বয়সে এসে কিছু শারীরিক বাধ্যবাধকতা চলে আসে। বিশেষত কার্ডিয়াক সমস্যা দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকই ভালো জানবেন শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী একজন ব্যক্তি কোন ব্যায়ামগুলো করতে পারবেন।
ডিস্ক ডিজেনারেশন পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নয়। তাই সময় থাকতেই সচেতন হওয়া উচিত।
Posted ০৮:৪৩ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain