| রবিবার, ২০ মে ২০১৮ | প্রিন্ট
ডেস্ক রিপোর্ট : ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, গত শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকের সময় দলের মহাসচিবের মোবাইল ফোনে কল আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। একে একে খালেদা জিয়ার মামলার কাজে দায়িত্বরত ৪ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সূত্র জানায়, ওপাশ থেকে তারেক রহমান বেশ কড়া স্বরে কথা বলছিলেন, জামিনের পক্ষে আপনারা যথাযথ যুক্তি তুলে ধরতে পারেননি। ব্রিটিশ আইনজীবীর সঙ্গেও বিএনপির আইনজীবীরা পরামর্শ করেননি। ড. কামাল হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগেও আপনারা বাধা দিয়েছেন। সব আমার নলেজে আছে। তবে আইনজীবীরা তারেকের কথার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানা গেছে।
তারেক রহমানের কড়া ধমক খেয়ে ঈদের আগেই খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করতে হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে রোববার (২০ মে) হাইকোর্টে রিট করবেন খালেদার আইনজীবীরা। গত শুক্রবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়াপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আইনজীবীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে কুমিল্লায় দুটি ও নড়াইলের একটি মামলার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় এগোবে দলটি। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দুবার আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও কারাগারে থেকে বের হতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ খালেদা তনয় তারেক রহমান। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও চাপা হতাশা বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা খালেদার মুক্তির জন্য আরো সক্রিয় হতে কেন্দ্রীয় নেতাদের জোরেশোরে তাগিদ দিচ্ছেন। এমনকি তারা আন্দোলনের মাধ্যমে দলীয় প্রধানকে মুক্তির জন্য কেন্দ্রে কয়েক দফা লিখিত আল্টিমেটামও পাঠিয়েছেন। এসব চাপ এড়াতে সব দিক বিবেচনা করে দলের নীতিনির্ধারকরা খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নতুন তৎপরতা শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার আইজীবীদের ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক হয় আইনজীবীদের।
বৈঠক সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, মাহবুবুল আলম তালুকদারসহ খালেদা জিয়ার ১২ সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের সবাই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতেই খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা তোলেন মির্জা ফখরুল। দলীয় প্রধানের কোন মামলা কী অবস্থায় আছে জানতে চান তিনি। এমনকি কোন প্রক্রিয়ায় এগোলে অতি দ্রুত খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে এসব বিষয় বিস্তারিত জানতে চান ফখরুল। ২বার জামিন হওয়ার পরও দলীয় প্রধান কারাগারে থাকায় আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গত ১২ মার্চ আদালত থেকে ৪ মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার পরও মুক্তি পাননি খালেদা জিয়া। কুমিল্লার নাশকতার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আটকে রাখা হয় কারাগারেই। ২ মাস পর গত ১৬ মে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ আপিল বিভাগ বহাল রাখলেও কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্তত আরো ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় খালেদাকে। একই সঙ্গে আদালত আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের নেতারা। খালেদা নিজেও এ নিয়ে হাতাশা প্রকাশ করেছেন। বার কাউন্সিল নির্বাচনের আগের শুনানিগুলোতে আইনজীবীদের ভূমিকা ছিল গা ছাড়া। নির্বাচনের প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কা থেকেই তারা দ্রুত আদেশের জন্য আপিল বিভাগকে চাপ দেননি। গত ৮ মে শেষ শুনানির দিন হালকা উপস্থাপনার জের ধরে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় মির্জা ফখরুলের। তিনি আইনজীবীদের বলেন, কি বললেন? এর চেয়ে ভালো যুক্তি আমিই দিতে পারতাম। ম্যাডামের শুনানিতে আপনাদের উপস্থাপনা দেখে মনে হলো- বিষয়টাকে আপনারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এমনকি ৯ মে দুপুরের পর কারা চিকিৎসক খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গেলে তিনিই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসনকে আদালতের আদেশ ১৫ মে হবে বলে জানান। খালেদা জিয়া এ কথা শুনে অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে যান। তিনি বলেন, ওদের আমি বারবার বললাম, আমি গুরুতর অসুস্থ এ কথাটা আদালতকে জানাতে কিন্তু ওরা কী আর্গুমেন্ট করল? বাড়ির মামলার সময়ও সরকার এদের ম্যানেজ করেছিল, এখনো হয়তো করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা পাল্টা প্রশ্ন করেন, চেয়ারপারসনের জামিনের বিষয়ে আইনজীবীরা কী করছেন? আইনজীবীদের গাফিলতি এবং অদক্ষতার কারণেই খালেদা জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় সাজা পেয়েছেন। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই এখন তিনি জামিন পাচ্ছেন না। এমনকি উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের আরো মনোযোগী হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দল থেকে। তারা কী করেন সেটা আগামীতে দেখা যাবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আগামীতে ম্যাডামের জামিনের বিষয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু করা হবে। তার কুমিল্লা ও নড়াইলের মামলাসহ বাকি সব মামলা- যেগুলোতে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করব। আশা করছি খুব অল্প সময়ের ভেতরেই আমরা তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি করতে পারব। সূত্র: ভোরের কাগজ
Posted ১৪:১৫ | রবিবার, ২০ মে ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain