শনিবার ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না: মেজর হাফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট

ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না: মেজর হাফিজ

ছাত্র–জনতার বিপ্লবকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ।

তিনি বলেছেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছিলো নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর। ছাত্র-জনতাসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে। রংপুরের ১২ জন জীবন দিয়েছে। এই বিপ্লবকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি’র বিভাগীয় শোভাযাত্রা পূর্বে রংপুরের কালেক্টরেট মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি  এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই দেশ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। আমি প্রথমবার ১৯৭১ সালে শহীদ জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করেছিলাম। তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে মুক্তিবাহিনী তৈরী করেছিলাম। সেখানে ট্রেনিং দিয়েছি, রাইফেল চালানো শিখেছিলাম। দেশের মধ্যে একটি মাত্র জেলা মুক্তিবাহিনী দখল করেছিলো। জেড ফোর্স নেতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেট জেলা দখল করেছিলাম। আমি সেই আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। সেই সময় মুক্তিবাহিনীরা যে সাহস দেখিয়েছিলো, তারা ছিলো স্বশস্ত্র। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা সাহস দেখিয়েছে, তারা ছিলো নিরস্ত্র। সাড়া বিশ্বে নন্দিত হয়েছে।

যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রিয় বিএনপির সৈনিকরা, প্রিয় রংপুরবাসী। আমাদের এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি। জুলাইয়ে যে বিপ্লব হয়েছে, সেই বিপ্লব সফল হবে সেদিন, যেদিন জনগণের সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। তখনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির সৈনিকরা ১৭ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দৃঢ় অবিচলভাবে অপেক্ষা করুন, আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন সবাইকে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার জন্য। বিএনপি শহীদ জিয়ার দল হিসেবে এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে করে বিএনপির মুখে কালিমা লিপ্ত হয়। আপনারা নিজেরা সাবধান থাকবেন, দুর্বৃত্তরা অপকর্ম করে বিএনপির নাম ভাঙ্গাতে চাইবে। আমরা সাবধান থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

সংস্কারের জন্য বিএনপির ৩০ দফা সংস্কার কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করে মেজর হাফিজ বলেন, বিএনপি ৩০ দফা সংস্কার কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকার আমাদের সংস্কার প্রস্তাবকে মান্য করে ৬ টি কমিশন গঠন করেছে। যাতে করে শহীদ জিয়া, আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, সেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ড. ইউনূস সরকার পদক্ষেপ নিবে আশা করি। আমরা আশা করি, প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূসের এই সরকার নির্বাচন সম্পর্কিত সংস্কার সাধন করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিবেন। যাতে করে নির্বাচিত ব্যক্তিরা দেশ শাসন করতে পারে।

তিনি বলেন, দেশে এক শ্রেণির তথাকথিত সুশীল নামের বুদ্ধিজীবী রয়েছে, যাদের গণতন্ত্র পছন্দ না, তারা গরীবের শাসন পছন্দ করে না। তারা নিজেরা যেমন ভোট দেন না, তেমনি অন্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করাকে পছন্দ করেন না। প্রতিদিন টেলিভিশন খুললেই কি নির্মমতা। সেই নির্মমতা দেখলে মনে হয়, আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই।

যারা মেশিন গান দিয়ে ছাত্রের বুকের ওপর গুলি চালায়, যারা ১৭ বছর ধরে মানুষকে বাকরুদ্ধ করে রাখে। যারা গণতন্ত্রকে পদদলিত করে রেখেছিলো। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের শত্রু। তারা আমাদের ভারতের দাস বানিয়েছে রেখেছিলো। আমরা আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দাস হতে চাই না

 

বিএনপির এই নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রচেস্টার ফলে একটি যুগান্তকারী বিপ্লব দেখেছি। এই বিপ্লবে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো মানুষ কল্পনাও করে নাই, জুলাই মাসে ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাবে। আল্লাহর অশেষ  রহমতে সম্ভব হয়েছে। বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। বহু তরুণ জীবন দিয়েছে, ৬০ লক্ষ মামলা হয়েছে, অনেক গুম হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছি। সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে বিএনপির ৪২২ জন জীবন দিয়ে গণতন্ত্র পথকে সুগম করেছে। কারো কারো মনে হতে পারে ওরাই কেবল এই আন্দোলন করেছে। এর জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে বিএনপির সাহসী সৈনিকরা। গত ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করেছি।

এর আগে আন্তজার্তিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দুপুর থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। এসময় নেতাকর্মীদের হাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের ছবি, জাতীয় ও দলীয় পতাকাসহ বিভিন্ন প্লাকার্ড দেখা যায়। ধীরে ধীরে কানায় কানায় ভরে যায় নগরীর ঐতিহাসিক কালেক্টরেট মাঠ। পরে বিকেলে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে সাড়ে ৪ টায় শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ। এরপর শোভাযাত্রাটি কালেক্টরেট মাঠ থেকে বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

শোভাযাত্রার পূর্বে বিভাগীয় সমাবেশে রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আব্দুল হাবিব দুলু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৬:৫৯ | মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com