নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা, নতুন এই ধরণটি আগের সব ভ্যারিয়েন্ট-এর চেয়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি চীনের কয়েক জায়গাসহ ভারতের কেরালায় শনাক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ এর নতুন এই ধরন জেএন.১।
গত ৮ ডিসেম্বর রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে তিরুবনন্তপুরম জেলার কারাকুলাম থেকে একজন আরটি-পিসিআর পজিটিভ আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী নারী ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেসের (আইএলআই) হালকা লক্ষণ ছিল এবং কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন।
এই ধরনটি আবারও বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের শঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বিপদের সতর্কতাকে সামনের দিকে নিয়ে আসছে।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) কোভিড-১৯-এর নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে চীনে, যার নাম জেএন-১। ইতোমধ্যে দেশটির অন্তত সাত জন রোগীর শরীরে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। এতে করে ফের ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার চীনের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ বিভাগের তথ্য দেখিয়ে জানিয়েছে, করোনার জেএন-১ উপরূপে আক্রান্ত চীনের সাত জন। এই মুহূর্তে ওই উপরূপের ব্যাপকতা নেই বললেই চলে। তবে তার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না একেবারেই। এই উপরূপের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা কেমন, তার উপরে নির্ভর করছে চীনের ভবিষ্যৎ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, করোনর নতুন উপরূপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এর আগে করোনাভাইরাসের নতুন একটি উপধরন বিএ-২.৮৬ শনাক্ত হয়েছিল যাকে জেএন.১ বলে ধারণা করা হতো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ সেন্টারের (সিডিসি) বরাতে জানানো হয়েছে, জেএন.১ এবং বিএ.২.৮৬-এর মধ্যে খুবই সামান্য পার্থক্য রয়েছে।
চলতি ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যে ক’জন কোভিড রোগী এই মুহূর্তে আছেন, তাদের ১৫-২৯ শতাংশের শরীরে রয়েছে জেএন.১ উপধরনটি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেরালায় এখনও পর্যন্ত একজনের শরীরে একই ধরনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে এটি আত্মঘাতী নাও হতে পারে বলে এখনই এই ধরনটি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এই ধরনটির পৃষ্ঠে মধ্যে থাকা স্পাইক প্রোটিন যা দেখতে ‘স্পাইক’ সদৃশ্য এটি ভাইরাসটিকে মানুষে সংক্রামিত করে থাকে। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে ধ্বংস ও অকার্যকর করতে পারে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন টিকা ইতোমধ্যে দেয়া শুরু হয়েছে।
জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা এবং কিছু পরিস্থিতিতে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পাতলা পায়খানাসহ বমি) সমস্যা রোগীদের মধ্যে উপসর্গ হিসেবে দেখা যেতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ রোগী হালকা শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গগুলো অনুভব করেন, যা সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়।
এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম সার্স-কোভি-২ বা করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তারপর থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত করোনার তাণ্ডবে বিশ্বব্যাপী মারা গেছেন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। সরকারি হিসাবমতে, বাংলাদেশে আগস্ট পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৭৬ জন।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছিল সার্স-কোভি-২ ভাইরাসের দুটি ধরন—আলফা ও ডেলটার। এই দুই ভাইরাসের মধ্যে শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল ডেলটা। ভাইরাসের এই ধরনই ২০২১ সালে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে ওঠে। করোনার এই ধরনে সংক্রমিত হয় বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ।
Posted ১৫:৪০ | রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain