নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট
ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদসংলগ্ন লন্ডন মুসলিম সেন্টার প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পুর্ণ করলো। ২০০৪ সালের ১১ জুন খুলে দেওয়া এই সেন্টারটি এ বছরের ১১ জুন গৌরবের ২০ বছর উদযাপন করেছে।
ইস্ট লন্ডন মস্ক, লন্ডন মুসলিম সেন্টার ও মারিয়াম সেন্টার কমপ্লেক্সে এখন একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারছেন। লন্ডনের মুসলিম কমিউনিটির জন্য এটি একটি বিশাল মাইলফলক।
এলএমসি প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। তবে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা সহজ ছিল না। ইস্ট লন্ডন মসজিদ সংলগ্ন যে স্থানটিতে আজ লন্ডন মুসলিম সেন্টার গৌরবের সাথে দাঁড়িয়ে আছে, সেই জায়গাটুকু একটি বিলাসবহুল প্রপার্টি ডেভোলপার কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন জমির মালিক। তখন স্থানীয় কাউন্সিল ও ডেভোলাপার কোম্পানির সাথে লড়াই করতে হয়েছিল। কমিউনিটির মানুষের আন্দোলনের মুখে কাউন্সিল জায়গাটুকু লন্ডন মুসলিম সেন্টারের জন্য বরাদ্দ দিতে বাধ্য হয়েছিল। টেলকোর (বর্তমানে সিটিজেনস ইউকে) সহায়তায় চালানো আন্দোলনে কমিউনটির মানুষ সফল হয়েছিল। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রয়াত কমিউনিটি নেতা নীল জেমসন।
২০০১ সালে প্রিন্স চার্লস (যুক্তরাজ্যের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস) লন্ডন মুসলিম সেন্টারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এরপর ২০০২ সালে শুরু হওয়া নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৪ সালে। এতে ব্যয় হয়েছিল ১০.৪ মিলিয়ন পাউন্ড। এই সেন্টার কমিউনিটির মানুষের ডনেশন এবং বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল লন্ডন ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি, ইউরোপীয় ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।
উদ্বোধনের দিন মক্কার মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম শায়খ আব্দুর রহমান সুদাইসের ইমামতিতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ একসাথে নামাজ পড়েছিলেন। সেদিন গোটা কমিউনিটির দীর্ঘ দিনের একটি লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছিল।
গত দুই দশক ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার বহু মানবিক কাজের জন্য উল্লেখযোগ্য তহবিল সংগ্রহে মাইলফলক অর্জন করে। এই সেন্টারে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেছেন।
ইএলএম এবং এলএমসি লন্ডনের মুসলিম কমিউনিটির জন্য বিভিন্ন সেবা এবং সুযোগ-সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত করে, যার মধ্যে রয়েছে ৩৩টি পৃথক প্রকল্প। যেমন নার্সারি, স্কুল এবং একটি বিজনেস উইং। এলএমসিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় লন্ডন ইস্ট একাডেমি সেকেন্ডারি স্কুল এবং আল-মিজান প্রাথমিক স্কুল। এই স্কুল থেকে ইতোমধ্যে ১০০ জনেরও বেশি হাফেজ তৈরি হয়েছেন।
এলএমসি প্রতিষ্ঠায় সফল্যের ধারাবাহিকতায় মহিলাদের জন্য একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয় এবং পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় মারিয়াম সেন্টার।
যেহেতু লন্ডনের মুসলিম কমিউনিটি দিনদিন বড় তাই ইস্ট লন্ডন মস্ক তার সেবার পরিধিও বৃদ্ধি করছে। চলমান তৃতীয় ধাপের সম্প্রসারণ প্রকল্প এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা মসজিদে মানুষের ধারন ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করেছে। আমরা আমাদের কমিউনিটির অব্যাহত সহযোগিতার জন্য কমিউনিটির মানুষের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমরা আশা করি, কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ তাঁদের সহযোগিতার হাত সবসময়ই প্রসারিত রাখবেন। যাতে আমরা গত ২০ বছরের ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারি এবং লন্ডনের মুসলিম এবং বৃহত্তর কমিউনিটির জন্য বহুমুখী সেবা কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।
২০ বছর পূর্তিলগ্নে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডক্টর আব্দুল হাই মুর্শেদ এক বিবৃতি বলেন, আমরা এই অসাধারণ প্রতিষ্ঠানটিকে বাস্তবে রূপ দিতে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। কমিউনিটির মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এত বিশাল অর্জন কিছুতেই সম্ভব ছিল না।
Posted ০৭:০৩ | শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain